কোথায় যাচ্ছে আমানত
দেশ ও জাতির মূল চালিকাশক্তি যদি অর্থনীতি হয়, তাহলে রাজনীতি তার বাহন আর সংস্কৃতি হচ্ছে নান্দনিক তৈলচিত্র। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র কখনই নান্দনিক হতে পারেনি। আর এই না পারার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও মুখ্য একটিই। আমরা আমাদের দর্শন অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে যোজন যোজন দূরে সরে এসে লুটেরাদের সমাজে প্রবেশ করেছি। যেখানে লুটই হচ্ছে সমাজের একমাত্র দর্শন। সংবাদমাধ্যম বলছে, ব্যাংকের আমানত খেয়ে ফেলছে মালিকরা। ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল পরিচালকদের ‘সমঝোতা ঋণ’।
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বিদ্যমান চেইনশপের সংখ্যার চেয়ে বেশি। সম্ভবত আগামী বছর এ সংখ্যা বর্তমানের ৫৭টিকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিজ্ঞজনরা বলছেন, আমাদের মতো দেশে ৫৭টি ব্যাংক অনেকটা মাথাভারী প্রশাসনের মতো। এ রকম একটি দেশে এত ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কি না তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। তবুও নতুন ব্যাংকের ছাড়পত্র দিতে কর্তৃপক্ষ কার্পণ্য করছে না। বর্তমানে যে ব্যাংকগুলো তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে তাদের পরিচালকের সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি। এরাই মূলত লুটপাটের অংশীদার। তবে এখানেও শ্রেণিবিন্যাস আছে। সবাই সমানভাবে লুটের অংশীদার হতে পারেননি। বড় মাপের সমঝোতা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। এদের মাঝে কয়েকজন বিতর্কিত। বিতর্কিত হলেও কিছু যায়-আসে না। এরাই দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি। এদের কাছে দেশের মানুষের পাওনা হাজার হাজার কোটি টাকা। এরা শুধু লভ্যাংশ থেকেই লুট করছেন না, গিলে খাচ্ছেন আমানত। মূলত এদের কাছে পুরো ব্যাংকিং খাতটাই জিম্মি হয়ে আছে। অন্তত প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সে কথাই বলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক এখন আর সেবামূলক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের অবস্থানে না থেকে লুটেরাদের টাকা তৈরির মেশিনে পরিণত হয়েছে। ফলে বেশ কিছু ব্যাংকের ভেতরের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছেন, খোলস থেকে প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে এলে বহু আমানতকারীকে পথে বসতে হবে।
আমরা মনে করি, বিষয়টির প্রতি অবহেলা করার বিন্দুমাত্র সময় আর নেই। আমরা এখন আর আমাদের জীবনকে নান্দনিক করার কথা বলছি না। আমরা আমাদের মর্যাদাকে অক্ষুণœ রেখে অস্তিত্ব রক্ষার কথা বলছি। দেশের ব্যাংকিং খাত যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে দেশের মেরুদন্ড ভেঙে পড়তে বোধহয় আর বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। খুব সহসাই আমরা একটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে প্রবেশ করব। যেখান থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই কম, যা কখনই প্রত্যাশিত নয়।
"