দুর্নীতির সঙ্গে ভালোবাসা
ভালোবাসার কথা উঠলে অনেকে অনেক কিছুর কথাই বলবেন। কেউ বলবেন বাবা-মাকে ভালোবাসি। কেউ বলবেন স্ত্রী-সন্তান। কেউবা বলবেন দেশ। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা বলবেন টাকা। তবে দুর্নীতিকে ভালোবাসেনÑএ কথা বলার লোককে সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদিও দুর্নীতিবাজের সংখ্যা এ দেশে সংখ্যালঘু হলেও খুব একটা কম নয়। সংখ্যালঘু তত্ত্ব বিশ্লেষণে এদের অবস্থান দ্বিতীয় না হলেও তৃতীয় তো বটেই। এ ক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও শক্তিতে এরা অদ্বিতীয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এদের বিপরীতে অবস্থান করলেও শক্তি ও সামর্থ্যে ওরা বেশির ভাগ মানুষের চেয়ে শত গুণে বলীয়ান। বিশেষ করে আমাদের দেশে এরা অপ্রতিরোধ্য। আর সেই অপ্রতিরোধ্য গতিতেই যেন ছুটে চলেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নিম্নমানের কাগজ দিয়ে এবারও ছাপা হচ্ছে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই। অর্থাৎ গতবারও করা হয়েছে একই কর্ম এবং এসব বই ছাপানোর শেষ মুহূর্তেও থামেনি অনিয়ম-দুর্নীতি। চলতি বছরের বইয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের সিল, স্টিকার দিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। কোথাও কোথাও যে পরিমাণ বই দেওয়ার তথ্য চালানে উল্লেখ রয়েছে, প্রকৃত অর্থে সেখানে তা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে অনেক কম। এদিকে ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে ছাড়পত্র ছাড়াই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। অনেক বইয়ের বাঁধাই হয়েছে নড়বড়ে বা অত্যন্ত নি¤œমানের। বই ছাপানো এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি নীতিমালাকে মান্য করে চলাই হচ্ছে সাধারণ নিয়ম। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের এ রকম নিয়মনীতি অনুসরণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির এমন এক স্তরে গিয়ে পৌঁছায়, যাকে আর লাগাম টেনে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সে রকম একটি প্রতিষ্ঠানের নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, কিছু প্রকাশক কোনো নিয়মনীতি না মেনেই তাদের ইচ্ছামাফিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। আর এনসিটিবির একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং আমরা মনে করি, এ প্রশ্ন উঠেছে, উঠবে এবং চলমান থাকবে; যত দিন পর্যন্ত না আমরা জাতি হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ দুর্নীতিগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হতে পারছি! এ ছাড়া আরো একটি পথ উন্মুক্ত আছে। আর সে পথটি হলো দুর্নীতি উচ্ছেদ প্রশ্নে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পন্ন করা। যার নেতৃত্ব দিতে হবে সরকারপ্রধানকেই। আমরা সেই দিনের প্রতীক্ষায় রইলাম।
"