শিক্ষক নয় কর্মকর্তা
কথায় বলে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। তবে আজ বোধহয় ধোপে টিকতে পারছে না এই মহান সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বাক্যটি। এ সময়ের কেউই যেন আর আস্থা রাখতে পারছে না মহামূল্যবান বাক্যটির ওপর। সোনার হরিণ ধরার স্বপ্নে সবাই ছুটে চলেছে। প্রতিযোগিতার শুরু কবে এবং কোথায়Ñসম্ভবত সবারই জানা। তারপরও বলতে হয়, লুটেরা পুঁজির চরিত্র আজ আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। একটি সদ্য স্বাধীন পুঁজিবাদী দেশে লুটেরা পুঁজির উদ্ভব হবেÑএটাই স্বাভাবিক। বেশ কিছুদিন তার প্রতিপত্তিও থাকবে। অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই পুঁজি যে জাতীয় পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে সরিয়ে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে বপন করবে তা কারোরই কাম্য ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা আমাদের জাতীয় পুঁজির চরিত্রকে বিসর্জন দিয়ে লুটেরা পুঁজির চরিত্রকে ধারণ করেছি। ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে। দুর্নীতি গ্রাস করেছে গোটা সমাজ ও সমাজব্যবস্থাকে।
কথায় বলে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। কিন্তু সেই শিক্ষাব্যবস্থার যদি বেহাল দশা হয়, তাহলে শিক্ষার মেরুদন্ডের অবস্থা কী তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বলছে, সরকারি কলেজের একশ্রেণির শিক্ষকের মূল লক্ষ্য শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়া। মাত্র তিন বছরের জন্য প্রেষণে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আর ফিরে আসতে চাইছেন না তারা পুরনো পদে। অনেকে যুগের পর যুগ আঁকড়ে আছেন কর্মকর্তা হিসেবে। কর্মকর্তা হিসেবে নৈতিক-অনৈতিক সুবিধাসহ নিচ্ছেন বাড়তি অনেক সুযোগ-সুবিধা। অনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে অনেকে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন এবং লাগাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এসব অসৎ মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে অসৎকর্ম করার সুযোগ দিচ্ছে কে?
লোকের অভাব নেই। খোদ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটই এদের ভরসা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরেই এদের কর্মযজ্ঞ। মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবান কর্তাব্যক্তিরাই এদের রক্ষক। লুট করা মালামালের এরাও অংশীদার। অতএব মাভৈঃ। যেখানে কোনো জবাবদিহিতা থাকে না, সেখানে মৃতুরও ভয় থাকে না। কিন্তু ভয় আছে। তবে তা অন্যত্র। লুটেরা পুঁজির বৈশিষ্ট্য নিয়ে গোটা জাতি যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে এ সমাজে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ হিসেবে স্বীকৃত মহামূল্যবান এই বাক্যটির অপমৃত্যু ঘটবে। যা কখনই কোনো দেশপ্রেমিক শক্তির কাম্য হতে পারে না। আমরা দেশপ্রেমিক শক্তির একজন হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। রাষ্ট্র নিশ্চয়ই সে পথযাত্রায় সঙ্গী হয়ে লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের রোষানল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবে। এটাই একমাত্র চাওয়া এবং প্রত্যাশা সবার।
"