সড়ক সংস্কারে চাই জরুরি পদক্ষেপ
সড়ক-মহাসড়ক বেহাল সারা দেশেই। সংস্কারের অভাবে এমনিতেই ছিল খানাখন্দে ভরা। তার ওপর যোগ হয়েছে অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা এবং বন্যা। রাজধানীর সড়কগুলোরও কংকালসার অবস্থা। স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না যানবাহন। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে তিন-চার ঘণ্টা। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সারা দেশে দুই হাজার ৩১৮ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। এ বছরের নভেম্বরে সারা দেশের সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। তখন পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এ দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়ক দুই হাজার ২৮৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৫০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমের আগেও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ছিল। যেগুলো সংস্কার করা হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, শুধু বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়কই নয়, তখন চট্টগ্রাম নগরের মোট এক হাজার ১৭৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল রূপ নেয়। এসব সড়ক সংস্কার করতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লাগবে বলে ধারণা করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ভাঙা সড়কের কোথাও পিচঢালাই উঠে গিয়ে বড় গর্ত, কোথাও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনা না থাকায় সড়কের আজ এ অবস্থা। তারা বলেন, আমাদের প্রতিটি স্তরে এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বেহাল সড়কের হাল ফেরাতে দরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ঠিকই বলেছেন। আমরা দেখেছি, সড়ক সংস্কারে কখনো কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। ইট, খোয়া বিছিয়ে তার ওপর বিটুমিন দিয়ে খানাখন্দ ভরে দায়সারা কাজ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, একটু মেরামত করলেই যে সড়কগুলো ব্যবহারোপযোগী হতো এবং জনদুর্ভোগ কমত, যথাসময়ে সেই কাজটি না করায় সড়কগুলোর ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে। ফলে যখন টেন্ডার দিয়ে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে, পথ চলতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। বাড়তি এ দুর্ভোগের অবসানে কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ নেবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।
"