এস আর শানু খান

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অগ্রগতি

নিরক্ষরমুক্ত মাগুরা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক ও সমৃদ্ধ জনপদের নাম মাগুরা। বাংলাদেশের প্রথম নিরক্ষরমুক্ত জেলা এই মাগুরা। ১৭৮৬ সালে ব্রিটিশ আমলে বাংলা প্রদেশের প্রথম গঠিত জেলা যশোর। কিন্তু একজন জেলা কর্মকর্তার পক্ষে এ বৃহৎ জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক কাজ সম্পাদন করা সম্ভবপর না হওয়ার কারণে এবং বিশেষ করে যশোর জেলার উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণকে মগ জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই ১৮৪৫ সালে যশোর জেলার প্রথম মহকুমা করা হয় মাগুরাকে। তখন এ মহকুমার প্রথম অফিসার হয়ে আসেন মি. ককবার্গ। মহকুমা হওয়ার আগে মাগুরা অঞ্চল ভূষণা ও মহম্মদপুর নামেই পরিচিত ছিল। পাল রাজত্বের সময় এ অঞ্চলের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অংশ শ্রীপুর এবং রাজাপুর নামে পরিচিত ছিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ছিল ভূষণা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে দেশের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে মাগুরাকে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত করা হয়। প্রথম ডেপুটি কমিশনার নিয়োগ করা হয় অরবিন্দু করকে। চারটি থানা সংবলিত এই জেলা। থানাগুলো হলো যথাক্রমে-মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর। যা দুটি সংসদীয় মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত।

মুঘল যুগেই মাগুরার নামকরণ করা হয়। মাগুরার নামকরণের সঠিক তথ্য আজো অনুদ্ঘাটিত বলা চলে। তবে শোনা যায়, কোনো এক সময় সুন্দরবনের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে মগ জলদস্যুদের দারুণ উৎপাত ছিল। কুমার নদ ও নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বর্তমান মাগুরাই ছিল সেই জলদস্যুদের আখড়া। এই নদীপথ দিয়েই তারা বর্গীদের মতো দস্যুপনা করত। সেখান থেকেই মগ এবং পরবর্তীতে মাগুরা নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর আমলে মগদের অগ্রযাত্রাকে যেখানে প্রতিহত করা হয় অর্থাৎ দস্যুদের গতিপথকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, সেই স্থানকে বলা হতো মগ-ঘুরা। অনেকের ধারণা, এই মগ-ঘুরা থেকেই মাগুরার উদ্ভব। মাগুরা তথা যশোর ও ফরিদপুর এলাকায় মগদস্যুদের অত্যাচার ও লুণ্ঠন কাহিনি আজো ইতিহাসের পাতায় এক বেদনাময় স্মৃতি হয়ে আছে। ‘ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এলো দেশে’ প্রচলিত ওই ছড়াতে সে সময়কার প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। এছাড়াও মাগুরা নামে দেশে অনেক গ্রাম রয়েছে, কিন্তু নানা কারণে মাগুরা জেলা এখন শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।

১৮৫৯-৬০ সালের হাজরাপুরে নীলকুঠিকে কেন্দ্র করে নীল অভ্যুত্থান ইতিহাসের একটি মাইলফলক। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে জনগণ প্রায় ১৬টি ফ্রন্টে পাকিস্তান হানাদারদের মোকাবিলা করে। মুক্তিযুদ্ধে লুৎফুন্নাহার হেলেনার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা আজো জনগণ গর্বভরে স্মরণ করে। মানুষ স্মরণ করবে বাংলাদেশের প্রথম নিরক্ষরমুক্ত জেলা হিসেবে মাগুরার নাম।

এক নজরে জেলা মাগুরা

আয়তন : ১০৩৮.৬৬ কিলোমিটার বা ৪১৫.৪৬৪ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ১৫ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.৫৬ শতাংশ, মহিলা ৪৯.৪৪ শতাংশ। অবস্থান : যশোর জেলা ও নড়াইল জেলার দক্ষিণে, রাজবাড়ী জেলার উত্তরে, ঝিনাইদহ জেলার পশ্চিমে ও ফরিদপুর জেলার পূর্বে মাগুরা জেলার অবস্থান।

নদ-নদী : জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে- গড়াই নদী, নবগঙ্গা নদী, ফটকি নদী, আলমখালী নদী, মধুমতী নদী, মুচিখালী নদী, মরাকুমার নদ, কুমার নদ, চিত্রা নদী, ভৈরব নদী, সিরাজপুর হাওর নদী বেগবতী নদী। এ জেলাতেই রয়েছে ইতিহাস খ্যাত রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ দুর্গ। রয়েছে অসামান্য প্রতিভাবান কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বাড়ি। তৎকালীন সময়ের পবিত্রতার এক দারুণ উপাখ্যান হিসেবে রয়েছে পীর তোয়াজউদ্দিনের মাজার ও দরবার শরীফ। রয়েছে ইতিহাসখ্যাত চন্ডীদাস ও রজকিনির ঐতিহাসিক ঘাট এবং সিদ্ধেশ্বরী মঠ।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist