অসম নীতিতে মিয়ানমার
আবার সেই পুরোনো নাটক। আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অস্তিত্ব উৎপাটন করতে এবার নিজেরাই স্থলমাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের দায়ী করল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেনি তারা। রোহিঙ্গাদের দায়ী করে তারা নতুনভাবে তান্ডবে মেতে উঠেছে আকিয়াবে (বর্তমান নাম সিটওয়ে)। রোহিঙ্গাদের ঘনবসতির একটি হচ্ছে আকিয়াব। জীবন বাঁচাতে আকিয়াবের মুসলমানরাও সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পথ খুঁজছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে স্থানীয় রাখাইনদের বৌদ্ধ সংগঠন নাডালা বাহিনী। হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবকে অনুসরণ করে অনেকেই বলছেন, মিয়ানমারের অসম নীতির ভূমিকা তাদের হতাশ করেছে। তারা বলছেন, একদিকে পাশবিক নির্যাতন ও গণহত্যা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়টি নিছক প্রতারণা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। যদি কোনো সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সর্বাগ্রে মিয়ানমার সরকারকে মিয়ানমারের অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আকিয়াব জেলায় নতুন করে নেওয়া গণহত্যার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে হবে। নতুবা মিয়ানমারের এ প্রস্তাবনাকে ‘রোহিঙ্গা উচ্ছেদ’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যের সূচনা হিসেবে ধরে নিতে কেউ কার্পণ্য করবেন বলে মনে হয় না।
এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠক ডাকতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পরিষদের সাত সদস্য। নিরাপত্তা পরিষদের এই তিন স্থায়ী সদস্যসহ মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর পরিচালিত অভিযানের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জানতে চায়। অপরদিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর শুদ্ধি অভিযান শেষ হওয়া নিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটি স্যাটেলাইট চিত্র ও ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, রাখাইন এখনো জ্বলছে।
সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে এই ইস্যুতে দুই দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাত জাতিরাষ্ট্র নতুন করে যে ডাক দিয়েছে জাতিসংঘ সেই ডাকে সাড়া দিলে হয়তো আগামীতে ছোট আকারে হলে রোহিঙ্গা সংকটে একটা ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসতে পারে। চীন, রাশিয়া, ভারত আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও এটাই পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা।
"