মো. আবু তালহা তারীফ

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মহররম

আশুরা কী ও কেন

আশুরা কী-

পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে ১০ মহররম তথা আশুরার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। মহরমের দশম তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। আরবি আশারা শব্দ থেকে আশুরা শব্দের উৎপত্তি। আশারা মানে দশ আর আশুরা অর্থ হলো দশম দিবস। এ মাসের সম্মানে আরবরা অন্যায়, যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত থেকে বিরত থাকত। তাই এ মাসের নামকরণ হয়েছে মহররম। এটি আরবি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস।

আশুরার ঘটনাবলি

১. আশুরার দিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র লাওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেছেন। ২. এই দিনে যাবতীয় সৃষ্টির রুহ পয়দা করেছেন। ৩. এই দিনে হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল। ৪. হজরত আদমের (আ.) তাওবা কবুল করা হয়েছিল। ৫. আদমকে (আ.) জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল। ৬. হজরত নুহ (আ.) মহাপ্লাবনের শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন। ৭. হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল। ৮. হজরত ইব্রাহিম (আ.) এই দিনে আগ্নিকুন্ড হতে নাজাত পেয়েছিলেন। ৯. হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ১০. হজরত মুসাকে (আ.) তাওরাত কিতাব নাযিল করা হয়েছিল। ১১. হজরত মুসার (আ.) শত্রু ফিরাউনের নীলনদে ভরাডুবি হয়েছিল আশুরায়। ১২. হজরত আইয়ুব (আ.) এই দিনে রোগ থেকে মুক্তি পান। ১৩. হজরত ইয়াকুব (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে ফিরে পান। ১৪. হজরত ইউনুসকে (আ.) মাছের পেট থেকে দজলা নদীতে পড়েছিলেন এই দিন। ১৫. হজরত সুলাইমান (আ.) পুনরায় রাজত্ব ফিরে পান। ১৬. হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং ১৭. হজরত ঈসাকে (আ) আকাশে তুলে নেওয়া হয় এই দিনে। ১৮. হজরত জিব্রাইল (আ.) সর্বপ্রথম আল্লাহর রহমত নিয়ে রাসুলো (সা.) নিকট আগমন করেছিলেন। ১৯. রাসুলের (সা.) প্রিয় নাতি হজরত হোসাইন তার সঙ্গী ও সহচররা কারবালার ময়দানে শহীদ হন। ২০. আশুরার কোন এক শুক্রবার ইস্রাফিলের (আ.) সিঙ্গায় ফুৎকার দেবেন এবং পৃথিবী ধ্বংস হবে।

আশুরার রোজা

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে যায় এবং তা নফল হয়। রাসুল (সা.) এ নিয়মে রোজা রাখতেন। এরপর যখন রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় গেলেন তখন তিনি দেখলেন, ইহুদিরা এই দিনে রোজা পালন করছে। রাসুল (সা.) কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনে আমাদের নবী হজরত মুসা (আ.) ফিরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই আমাদের নবী মুসা (আ.) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য এ দিন রোজা পালন করতেন। এজন্য আমাদের নবীর অনুসরণ করে আমরা এই দিনে রোজা পালন করি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমরাই বেশি হকদার মুসার (আ.) সঙ্গে সুসম্পর্কের।’ রাসুল (সা.) এই দিনে রোজা পালন করলেন এবং ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যাতে সামঞ্জস্য না হয় সে জন্য তিনি তার সঙ্গে এক দিন মিলিয়ে রোজা রাখতে বললেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে এক দিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ ১ম, ২৪১ পৃষ্ঠা)।

সুতরাং আশুরার রোজা পালন করা মুস্তাহাব। যদি কেউ পালন করেন তাহলে তিনি অজস্র সওয়াবের অধিকারী হবেন, তার গুনাহ মহান আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন (মুসলিম ১/৩৬৭ পৃষ্ঠা)।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও প্রাবন্ধিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist