ভেতরে কলকাঠি নাড়ছে কারা
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) আমরা অনেকেই রোহিঙ্গা বিদ্রোহী বাহিনী হিসেবে জেনে এসেছি। কিন্তু আজ সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হতে চলেছে। এ ধরনের একটি বালখিল্য কাজ কখনোই কোনো সুসংগঠিত গেরিলা বিদ্রোহী বাহিনীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। অগ্রপশ্চাত্যের অনেক কিছু ভেবেই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। অনেকেই বলছেন, মিয়ানমার পুলিশের ২৪টি তল্লাশিচৌকি ও সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটনা একটি সাজানো নাটক। এ ঘটনায় তথাকথিত স্যালভেশন আর্মির নাম ব্যবহার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীই কাজটি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আরসার প্রতি সহানুভূতিশীল রোহিঙ্গারাও প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন-যদি আরসা এ হামলা করে থাকে, তাহলে আরসার কার্যক্রম পরিচালনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিশ্বে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটকের ইতিহাস নতুন কিছু নয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ চলছে, তাকেও সাজানো নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। তালেবান এবং আইএস কোনো আদর্শ থেকে গড়ে ওঠেনি। বিশ্বজুড়ে এরা কারো না কারো এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে এবং এখনো করছে। বিশেষ করে এদের নেতৃত্ব সাধারণ মানুষকে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে বিপথে পরিচালনা করছে। মধ্যপ্রাচ্যকে আজ একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পরও বলা হচ্ছে জঙ্গিবাদীদের নির্মূল করার আগ পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে। অথচ এসব জঙ্গিবাদের জন্মদাতারা হচ্ছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। লালন-পালনকারীরাও তারা। মিয়ানমারের পুলিশচৌকি এবং সেনাঘাঁটিতে যারা হামলা চালিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কারখানাতেই তাদের জন্ম এবং তাদের নির্দেশ অথবা কর্মকান্ডেই এরা অ্যাক্ট করে। এরা কোনো বিপ্লবী অথবা স্বাধীনতাকামী শক্তি নয়। এরা এজেন্সি মানবগোষ্ঠী। এদের ব্যবহার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী একটি ছুতা তৈরি করে নির্লজ্জভাবে আরাকানের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর স্মরণকালের নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধ ও সংঘর্ষ নিরসন এবং প্রতিরোধ কার্যকর আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক তথ্যমতে, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ ও আরসার বাহিনীর মাঝে লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে; যা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরসার বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইঙ্গিত বহন করে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই মনে করেন, আরসা যদি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে, তাহলে কীভাবে তাদের কাজের জন্য এভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হয়! কেনইবা তারা বাস্তুচ্যুতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে? এটা কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়। রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করার জন্যই এই নাটক সাজানো হয়েছে। এখানেও আরসার ভেতরে বসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের পরিচালনা করছে অথবা তাদের নাম ব্যবহার করে ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। কোনো সভ্যতাই যা অনুমোদন করে না।
"