গণহত্যাকারী চিহ্নিত
মিয়ানমারের একজন বৌদ্ধ মানবাধিকার কর্মী ড. মং জার্নি আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে (পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল) তার দেওয়া জবানবন্দিতে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমার বাড়ি মিয়ানমারের মান্দালয় এলাকায়। জার্মানিতে হিটলার বলেছিলেন, ইহুদিরা জার্মান নয়। আর জার্মান নয় বলেই তাদের হত্যা করা হয়েছিল। সেদিক থেকে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের রোহিঙ্গা পরিচয়ে হত্যা করতেও রাজি নয়।’ ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে একটি উদারনৈতিক গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু নে উইন ’৬২তে সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই রোহিঙ্গাদের ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত হয়। এবং সেই থেকেই রোহিঙ্গারা সেøা জেনোসাইড বা মন্থর গণহত্যার শিকার। সম্প্রতি যার বিস্ফোরণ ঘটেছে। ড. মং জার্নির এ বক্তব্যের সঙ্গে বিশ্বের অনেকেই একমত পোষণ করে বলেছেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর চরিত্রের সঙ্গে সু চির চরিত্রের কোনো পার্থক্য নেই। এরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র। বিশ্বে এই প্রথম গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া একজন নারী ব্যক্তিত্ব।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনকারী সেনাবাহিনীর সুরেই কথা বললেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। তিনি দাঁড়াতে পারলেন না তার দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেনা সহিংসতা নিয়ে কোনো কথাই বললেন না তিনি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, রাখাইনে সেনাবাহিনী জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে অথচ সু চি বলছেন, কোনো সেনা সহিংসতা ঘটেনি। তার ভাষণের পরপরই আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, অং সান সু চি বালিতে মাথা গুঁজে রেখেছেন। বিবিসি বলেছে, সুচি সব জেনেও না জানার ভান করছেন। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা যায়, বহুল প্রতীক্ষিত ভাষণে সু চি শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বলা সংকট সমাধানের ‘শেষ সুযোগ’ গ্রহণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলেন।
রাখাইনে চলমান সেনা সহিংসতার প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ চাপ সামলানোর জন্য সু চি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও যাননি। আজ জতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরার পর পরিস্থিতির একটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরি হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। আমরাও মনে করি, সমাধান প্রশ্নে বিষয়টির একটি রোডম্যাপ খুঁজে পাওয়া যাবে। যা বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা।
"