গণ-আদালতে সু চি
নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণ-আদালতের মুখোমুখি হতে হলো। বিশ্ব জনমত বলেছে, নোবেল বিজয়ী কন্যা যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। এককভাবে কেবল সু চিকেই দায়ী করা হয়নি। এই অভিযোগে সু চির সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এবং দেশটির প্রধান ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। সু চি ছাড়াও সেনাপ্রধানসহ সামরিক কর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের অভিযোগে অভিযুক্ত।
কেবল রোহিঙ্গা মুসলমানরা নয়, মিয়ানমারের খ্রিস্টান, কাচিন, এমনকি বৌদ্ধ তারাংদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের জন্য সু চি ও তার সহযোগিদের দায়ী করে একটি মামলার শেষ পর্বের শুনানি গত সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে। এবং আগামী শুক্রবার এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সু চি অ্যান্ড গংয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে গত মার্চে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রোমভিত্তিক পারমান্যান্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সূচনা অধিবেশনে অভিযোগপত্রটি গৃহীত হয়। এখানে না বললেই নয় যে, ব্যতিক্রমধর্মী এই গণ-আদালতের ইতিহাসে এই প্রথম জেনারেলদের পাশাপাশি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কেউ নৈতিকভাবে দন্ডিত ও দোষী সাব্যস্ত হতে চলেছেন। যা ‘নোবেল’ নামের মহৎ সম্মাননার গৌরবকে কিছুটা হলেও ম্লান করবে।
এদিকে পিপিটি অং সান সু চি, মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিনথ স এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিং অন লেইনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে কিংবা তাদের বক্তব্য উপস্থাপনে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এর কোনো জবাব আসেনি। জবাব আসুক আর না আসুক, বিশ্ব মানবতা যে আজ মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে সে বিষয়ে বোধহয় আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। যদিও কতিপয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান মিয়ানমারের এই হত্যাযজ্ঞের পাশে দাঁড়ালেও তাদের দেশের আম-জনতা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপ্রধানদের মতামতের বিরুদ্ধে। আর এখানেই আবার নতুন করে প্রমাণিত হলো সত্যের জয় অবধারিত।
আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে নিজের এবং দেশের ইজ্জতকে বাঁচানোর জন্য মিয়ানমার একটি ইতিবাচক ভূমিকায় এগিয়ে আসতে পারে। আর এ জন্য প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে অং সান সু চিকেই। সম্ভবত এটাই হবে তার হারিয়ে যাওয়া গৌরবকে ফিরে পাওয়ার জন্য শেষ সুযোগ।
"