ধর্ষণের শেষ কোথায়
একটি সমাজব্যবস্থা নামতে নামতে কত নিচে নামলে তাকে আমরা আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সঙ্গে তুলনা করতে পারি? সম্ভবত আমরা আজ সেখানে এসে দাঁড়িয়েছি। তা না হলে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পরও সমাজে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কেন? আমরা সবাই যেন মুখে কুলুপ এঁটে চিৎকার করে যাচ্ছি, ‘এই কী সভ্য সমাজ!’ আসলে মুখে কুলুপ এঁটে যত চিৎকারই করা হোক না কেন তা কাউকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না। স্পর্শ করাতে হলে কুলুপ খুলে চিৎকার করতে হয়। সম্ভবত আমরা সবাই মুখে কুলুপ এঁটেই প্রতিবাদে নেমেছি। তা না হলে বরগুনার শিক্ষিকা ধর্ষণের ঘটনায় সহকর্মী শিক্ষক ছাড়া সবাই নীরব থাকবে কেন? একজন শিক্ষিকার ওপর দিনদুপুরে নির্যাতন হলো অথচ তার প্রতিবাদ হবে না, মানুষ আক্রান্ত শিক্ষিকার পাশে দাঁড়াবে না-এ কোন সমাজে আমাদের বসবাস! সুশীল সমাজ আর সাদা মনের মানুষরা আজ কোথায়? হয়তোবা অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্বে এসে তারাও ভোগবাদের কাছে আত্মসমর্পণের চিন্তায় পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চুপ থেকে সময়ক্ষেপণে ব্যস্ত। এ নীরবতা বা সময়ক্ষেপণ দেশ ও জাতির জন্য একটি কলঙ্কিত অধ্যায় ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক আজমিরি বেগমের প্রতিবেদন বলেছে, ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার হাতে ও গালে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অথচ এক দিন আগে একই ডাক্তার বলেছিলেন, ‘পরীক্ষায় সম্ভবত ধর্ষণের আলামত মিলেছে।’ মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তার এই বিপরীত অবস্থানের কারণ আমাদের জানা নেই। তবে বরগুনার সিভিল সার্জন বলেছেন, আলামত পাওয়া না গেলেও শিক্ষিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর আক্রান্ত শিক্ষিকা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘ফল উল্টে দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি বলেছেন, ‘প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ যদি এখনই এ ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়, তবে এই সন্ত্রাসীরা ক্রমেই উৎসাহিত হবে এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই থাকবে।’
ঘটনার পর ছয় দিন পার হয়ে গেল। ধর্ষণ হোক বা না হোক, ধর্ষণের চেষ্টা যে হয়েছে, এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। শিক্ষিকা যে আক্রান্ত হয়েছেন, ডাক্তাররা এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি। কিন্তু তারপরও ধর্ষকদের একজনকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব সবারই জানা। সবাই এটাও জানেন, আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে পুলিশসহ আমরা সবাই যেন আমাদের নৈতিকতা হারিয়ে দানবে রূপান্তরিত হয়েছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় নৈতিকতাকে ফিরিয়ে এনে দানবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা। অন্যথায় এ দেশ এক দিন ধর্ষকের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এই পবিত্র মাটিকে কলুষিত করবে।
"