ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২৪ আগস্ট, ২০১৭

খাল

উদ্ধারের বিকল্প নেই

জলাবদ্ধতা রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের পর পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা না থাকায় জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে পড়ছে। রাজধানীর প্রাকৃতিক খালগুলোর বড় অংশ অপদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সবার বিশ্বাস। বিশ্বাসটিও অমূলক নয়। নগর বিশ্লেষকরাও এই মত পোষণ করেন।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধার বা খননের বদলে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। বেশির ভাগ খালের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র ছিল, এগুলোর সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদ-নদীর সঙ্গে। সূত্রাপুর লোহারপুল হয়ে বুড়িগঙ্গা, মোহাম্মদপুরের বছিলা হয়ে বুড়িগঙ্গা, উত্তরার আবদুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, উত্তরখান হয়ে তুরাগ, খিলক্ষেত ডুমনি হয়ে বালু ও মানিকনগর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযোগ ছিল খালগুলোর। সে সবই এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। সরকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর মধ্যাঞ্চলে দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও হাতিরঝিলের পানি নিষ্কাশনের সহজ মাধ্যম রামপুরা খাল সংস্কার ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেগুনবাগিচা খালের ওপর বক্স কালভার্ট তৈরি করে তার ওপর রীতিমতো স্থায়ী সড়কপথ গড়ে উঠেছে। সেগুনবাগিচা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ বক্স কালভার্ট প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় তা পানি নিষ্কাশনের যোগ্যতা হারিয়েছে। আবদুল্লাহপুর খাল ছিল রাজধানীর একাংশের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম। রাস্তা ও রাজউকের প্লটের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের লেকের উত্তর প্রান্ত ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে আবর্জনা ফেলার কারণে। ভরাটকৃত স্থানে প্লটও তৈরি করা হয়েছে। মান্ডা খাল ছিল রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম। দখলদারদের কবলে পড়ে এ খালটি সঙ্কুচিত হতে হতে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বছিলা খাল, মগবাজারের পরীবাগ খাল, আরামবাগ খাল, রাজারবাগ খাল, নন্দীপাড়া খাল, বাউখার খাল ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধার এবং খননের উদ্যোগ নিতে হবে। সেটিই হবে সেরা সমাধান।

রাজধানী থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রাকৃতিক জলাধার। গত ৩২ বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে উধাও হয়ে গেছে ৩৯টি খাল। এর মধ্যে রয়েছে ধোলাইখাল। রাজধানীতে এ মুহূর্তে ১৫টি খাল থাকলেও এর চারটি লেক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে টিকে আছে। অন্যগুলো ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়ে নর্দমার আকৃতি পেয়েছে।

রাস্তা ও রাজউকের প্লটের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্ত দখল করা হয়েছে ময়লা ফেলে। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণ পাশে বহমান খালটি এখন পুরোপুরি নর্দমা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের এক সময়ের সুবিখ্যাত মান্ডা খাল সবুজবাগ থেকে শুরু হয়ে মাদারটেক, দক্ষিণগাঁওয়ের পাশ দিয়ে বালু নদীতে মিশেছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি ওই এলাকার পয়ঃনিষ্কাশনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দখল-দূষণে অনেক আগেই সংকুচিত হওয়া খালটি এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। খাল-বিল-জলাশয় যথেচ্ছভাবে দখলের পরিণতিতে বর্ষা হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ নেমে আসে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যে সামান্য অংশ টিকে আছে তা দখল ও দূষণের কারণে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে বহু আগেই এবং তা মশক উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অস্বস্তিকর থাবা নাগরিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের বিলুপ্তি তাদের জন্য কী অভিশাপ সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতার অবসান শুধু নয়, রাজধানীতে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার ও তা পুনঃখননের উদ্যোগ নিতে হবে। হাতিরঝিলের মতো কাজটি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিলে হয়তো সুফল পাওয়া যেতে পারে।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist