ঈদযাত্রায় টিকিট বিড়ম্বনা
এবারের ঈদুল আজহা কতটা আনন্দ বয়ে নিয়ে আসছে তা জানা না থাকলেও এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, এবারই বোধহয় আমরা আমাদের ইমানের শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। দেশ বন্যায় ভাসছে। কষ্টের কাঁথা গায়ে জড়িয়ে বন্যার্তরা তাদের যন্ত্রণার ব্যারোমিটারে পরিমাপ করে দেখছে আর কতকাল এ দুর্ভোগ তাদের বহন করতে হবে!
চারপাশে যত দুর্যোগই থাকুক না কেন ঈদে বাড়িতে যাওয়া হবে না-আমাদের সমাজ তা ভাবতে শেখায়নি। আমরা দেশে ফিরব, এটাই সত্য। দেশ বলতে আমরা আমাদের গ্রামকে বুঝি, যেখানে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের পৈতৃক ভিটা। আমরা ফিরব। ফিরব বন্যাপীড়িত স্বজনদের কাছে। প্রতিযোগিতায় নামব কে কত বেশি করে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে পারি। আমরা যত বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারব আমাদের কোরবানি ততধিক গ্রহণীয় হবে। একই সঙ্গে আমরা আমাদের ইমানী দায়িত্ব পালনের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হব। আর সে কারণেই সরকারের কাছে স্বনির্বন্ধ অনুরোধ, আমাদের যাতায়াতকে সহজ করে দিন। বিড়ম্বনা মুক্ত করে দিন।
গণমাধ্যমে বাসের টিকিট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ট্রেনেও সহজলভ্য নয়। কাউন্টারে টিকিটের জন্য হাত পাতলেই বলা হচ্ছে, ৩০ ও ৩১ তারিখের কোনো টিকেট নেই। কল্যাণপুর এবং গাবতলী বাস টার্মিনালের চিত্র এক ও অভিন্ন। অভিযোগ উঠেছে, যারা টিকিট সংগ্রহে সফল হয়েছেন-তাদেরকে অতিরিক্ত মাসুল দিয়েই সোনার হরিণকে ধরতে হয়েছে। অভিযোগের পক্ষে-বিপক্ষে অর্থাৎ ক্রেতা ও বিক্রেতার পাল্টাপাল্টি জবাবে সমস্যা সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। পরিসংখ্যান বলছে, উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলায় বন্যার কারণে বাসের ট্রিপ অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বলছেন, বন্যার কারণে রাস্তার অবস্থা এতই নাজুক যে, স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়। এ বিবেচনা থেকেই তারা তাদের ট্রিপের সংখ্যা কমিয়েছেন। বিগত দিনে ঈদের সময় ট্রিপের সংখ্যা বাড়িয়েও চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এবার যাত্রী সংখ্যা না কমলেও ট্রিপের সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। সুতরাং এ বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে প্রশাসনকে। আমরা মনে করি, প্রশাসন এগিয়ে এসে ইমানী দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বন্যার্তদের পাশে তাদের স্বজনদের পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এবারের কোরবানিতে এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।
"