প্রকাশ ঘোষ বিধান

  ১৫ আগস্ট, ২০১৭

বোধ

হাতি সুরক্ষা এবং ...

পৃথিবীর স্থলপ্রাণীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতি। তবে ক্রমেই আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব এবং মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে দিন দিন হাতির সংখ্যা কমছে। প্রকৃতির বড় বন্ধু হাতি হুমকির মুখে। প্রকৃতির এ বন্ধুকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বে এশিয়ার হাতির সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার দাবি করা হলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২শ’র বেশি হবে না। হাতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের হানা ও প্রকৃতিতে খাদ্য সংকটের কারণে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমছে।

হাতি সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে প্রতিবছর ১২ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব হাতি দিবস। বাংলাদেশের বন বিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য জনসচেতনতা তৈরি করা। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে। এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি। যদিও শারীরিকভাবে দেখতে প্রায় একই রকম, তবুও এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। এশিয়ান হাতি সাধারণত লম্বায় ৬ থেকে ১১ ফুট হয়ে থাকে আর আফ্রিকান হাতির ৬ থেকে ১৩ ফুট। এশিয়ান হাতির ওজন ২ থেকে ৫ টন আর আফ্রিকান হাতির ওজন ২ থেকে ৭ টন। এশিয়ান হাতির কান ছোট আর আফ্রিকান হাতির কান বড়। এশিয়ান হাতির বুকের হাড় ২০ জোড়া আর আফ্রিকান হাতির বুকের হাড় ২১ জোড়া। আফ্রিকান হাতির স্ত্রী-পুরুষ উভয় হাতির প্রলম্বিত দাঁত আছে আর এশিয়ান হাতির ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের দাঁত আছে। হাতি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর বাঁচে।

বাংলাদেশের স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের কাসিয়াখালী, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবনের লামা ও আলিকদম; রাঙামাটির কাউখালী, কাপ্তাই ও লংগদু এবং খাড়গাছড়িসহ দেশের ১১টি বন বিভাগে এদের বিচারণ করতে দেখা যায়। ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ৩৮০টি বন্যহাতি ছিল। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী ২৩৯টি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে আইইউসিএনের জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি হাতি। উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। আর অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি।

৯টি কারণে বাংলাদেশে হাতি কমছে। আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা এবং চোরাশিকারির নিষ্ঠুরতা। বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ভুটান ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতির দেখা মেলে। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার এশিয়ান হাতি এবং ৩৫ থেকে ৪০ লাখ আফ্রিকান হাতি রয়েছে। কিন্তু ১০০ বছর আগে আফ্রিকান হাতির মোট সংখ্যা ছিল এক কোটির ওপরে। গত ১০ বছরে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে। বন উজাড় ও হাতির দাঁতের জন্য শিকারিদের হাতে নিহত হওয়া হাতি কমার অন্যতম কারণ। মানুষ নানা কারণে বনজঙ্গল উজাড় করছে। আবাদি জমি বাড়াতে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য বনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়াতে বন্যপ্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকটের কারণে এরা অনেক ক্ষেত্রে লোকালয়ে ঢুকছে। তারা খাবারের জন্য ফসলের মাঠ ও মজুদ করা খাদ্যশস্যের জন্য বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে। এর ফলে মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষ বাড়ছে। তাছাড়া হাতির চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং আবাসস্থল কৃষিকাজে বেদখল হওয়ার কারণে মানুষ ও হাতির বিরোধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে মানুষ ও হাতির মধ্য চলমান বিরোধ নিরসনে হাতির আবাসস্থল বন-জঙ্গল উজাড় করা বন্ধ করতে হবে। বনে হাতির আবাসস্থলে নিরুপদ্রব বিচরণ এবং খাদ্য সংকট নিরসন করতে পারলে হাতির সুরক্ষা অনেকাংশে সম্ভব হবে। এ ছাড়াও জনসচেতনতা রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist