তলিয়ে যাচ্ছি পানির নিচে
বাড়ছে বন্যা। ধীরে ধীরে আমরা তলিয়ে যাচ্ছি পানির নিচে। তলিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বন্যায় ডুবে গেছে রেললাইন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে যোগাযোগ। খোশ মেজাজে আছে দুর্নীতি। গ্যালারিতে বসে বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে বলছে, প্রকৃতি কত সুন্দর। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ১৯ জেলা আবার বন্যাকবলিত। পানিবন্দি হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। মারাত্মক ক্ষতির মুখে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রেললাইনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে রেলপথ। ভেসে গেছে জনপদ। শ্রাবণ বাতাসে কেবল কষ্টের বেহালা কাঁদে জলের কণায়।
আকস্মিক নয়, অনেকটা পরিকল্পিত বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। অনেকটা পরিকল্পিত এ কারণে যে, আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে আমাদের উজানে ভারত প্রায় প্রতিটি নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতিকে বিনষ্ট করেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রেখে তা এক তরফা ব্যবহার এবং বর্ষা মৌসুমে নিজেকে রক্ষা করতে একসঙ্গে বাঁধের সব মুখ খুলে দিয়ে ভাটি অঞ্চল অর্থাৎ বাংলাদেশকে পানির তলায় ডুবিয়ে মারছে। বন্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরাও একই কথা বলেছেন। এক দিকে নদী তার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গভীরতাকে হারিয়ে ফেলে পানি ধারণ ক্ষমতাকেও হারিয়েছে। আর এই ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরাও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে ডুবছে রেলপথ, সড়ক ও জনপদ। পুড়ছে কপাল, কাঁদছে মানুষ।
মাত্র এক দিনে ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৮১টির পানি বেড়েছে। এর মাঝে ১৭টি পয়েন্টের পানি অতিক্রম করেছে বিপৎসীমা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরো তিন দিন পানি বাড়তে পারে। আগস্টে হয়ে থাকা বন্যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে বলা হয়, এবারের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এক দিনে এভাবে একসঙ্গে এত নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কোনোক্রমেই স্বাভাবিক বলা যায় না। এখন ভারী বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি কমে গেলেও এই পানি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়। তারা বলেছেন, বন্যা এখনো যমুনা-সুরমা বেষ্টিত আছে। যে কোনো সময় তা ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনার দিকে ধাবিত হতে পারে। ওই তিনটি নদীর যে কোনো দুটির পানি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে সারা দেশই বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে সরকারকে বন্যা মোকাবিলায় আগাম সতর্ক হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে এবং আগামীর জন্য স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিকল্পনাসহ এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এগিয়ে আসবে-এটাই বাস্তবতা এবং আমাদের প্রত্যাশা।
"