সংশোধনী সমাচার
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরব রাজনৈতিক অঙ্গন। চায়ের টেবিলে ঝড় না উঠলেও মেঘের আলামত রয়েছে সর্বত্র। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা রায়ের সমালোচনায় মুখর। অন্যদিকে এই রায় ও পর্যবেক্ষণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে বিএনপির মন্তব্যে। এই নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর থেকে মাঠ থেকে উধাও হয়েছে অন্যসব ইস্যু।
‘রায় নিয়ে রাজনীতি’-এ বিষয়টিও আমলে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আমরা অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের ফাঁদে পা দেব না।’ আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে একই দিন সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, ‘আমরা রায় নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। রায় ও পর্যবেক্ষণের কিছু বিষয়ে আমরা দুঃখিত ও সংক্ষুব্ধ। তারপরও রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।’ তিনি আরো বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে নয়, সরকার আইনিভাবেই বিষয়টি মোকাবিলা করতে চায়।
এদিকে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে কোনো পক্ষেরই আর রাজনীতি করা উচিত নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘রায় নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো পক্ষেরই রাজনীতি করা ঠিক নয়। প্রধান বিচারপতিকে অপসারণে আন্দোলন করা হবে, খাদ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যকে তিনি খারাপ লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদও বলেছেন একই কথা। তার মতে, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী অত্যন্ত গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের দু’জনের এই বক্তব্যের পর এই নিয়ে আর কারো রাজনীতি করা ঠিক হবে না। গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এই রায়কে সামনে রেখে বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্যে মাঠ গরম করে তোলার চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ মুহূর্তে বিষয়টি তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। তবে, আগামীর যেকোনো একটা সময়ে এই রায় রাজনীতির মাঠকে কিছুটা হলেও উত্তপ্ত করবে। এদিকে রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে অন্য ক‘য়েকটি দলের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগকে কারো প্রতিপক্ষ না বানানোর আহ্বান জানানো হয়।
আমরা মনে করি, আদালতের রায় নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা থেকে সবারই বেরিয়ে আসা উচিত। সাধারণ মানুষ এখনো আদালতকে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মান্য করে। তাদের এই বিশ্বাসের ওপর আঘাত এলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র, যা আমাদের কাম্য নয়।
"