সোলায়মান মোহাম্মদ

  ১২ আগস্ট, ২০১৭

হজ

দুর্ভোগের যেন শেষ নেই

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এই পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজই একমাত্র ইবাদত যেটি করতে চাইলে আর্থিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে ফিট থাকতে হয়। সারাবিশে^র মুসলমানদের মধ্যে হজ একটি কাক্সিক্ষত এবং প্রত্যাশিত ইবাদত। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। বিশে^র অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় ভারত উপমহাদেশের মানুষ বিশেষ করে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের মুসলমানরা ইসলামের আহকাম আরকানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের মুসলমানরা ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখে জীবনে একবার হলেও পবিত্রতম ভূমি যেখানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই তীর্থ ভূমিতে যাবেন।

প্রতিটি বছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয় এই হজ প্রক্রিয়া। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান মুখিয়ে থাকেন কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের দেশের মানুষজন একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে ইবাদতের দিকে আগের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকে পড়েন। তাদের চিন্তা-চেতনা ও ইবাদতের মাধ্যমে একটাই প্রার্থনা, ‘মৃত্যুর আগে আল্লাহতায়ালা তাদের হজ করার সৌভাগ্য নসিব করেন।’ অনেকেই সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থের একটা অংশ থেকে হজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ধর্মপ্রাণ মানুষদের হাতে যত টাকাই থাকুক না কেন, তারা সাধারণত নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেই হজে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পবিত্র স্থানে যেতে হলে পবিত্র মাটি বিক্রি করেই যেতে হবে, এটাই তাদের বিশ^াস। কোনো অন্যায় পথে অর্জিত টাকা দিয়ে কেউ হজে যান না। অন্যদিকে সামর্থ্যবানদের জন্য আল্লাহ হজ ফরজ করে দিয়েছেন। এতে বিত্তশালী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হজ করতেই হবে-এমন ধর্মীয় বিধান রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, প্রতিটি বছরই হজে যাওয়ার সময় হাজীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবারও তাই দেখতে হলো। এবার যেন দুর্ভোগের মাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় ৩০-৪০ হাজার হাজীর হজে যাওয়ার বিষয়টি একরকম অনিশ্চয়তার চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবের মন্ত্রিপরিষদ গত বছরের ৭ আগস্ট নতুন ভিসা পদ্ধতি অনুমোদন করে, যা ২ অক্টোবর কার্যকর হয়। যাতে স্পষ্টভাবে বলা ছিল, অতিরিক্ত ফি হিসেবে ২ হাজার রিয়াল বাড়ানোর হয়েছে। অথচ লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় হলো, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের জারি করা হজ প্যাকেজের কোথাও এই বাড়ানো অতিরিক্ত রিয়ালের কথা উল্লেখ নেই। যদিও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে তা অনেক আগেই অবহিত করা হয়েছিল। এই অতিরিক্ত ফি সংক্রান্ত কারণে অনেকের ভিসার প্রসেসিং বা তা পেতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু এতে করে হজযাত্রা শুরুর প্রথম ১৪ দিনে যাত্রী সংকটে ১৯টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এমতাবস্থায় সৌদি সিভিল অ্যাভিয়েশন যদি অতিরিক্ত কোনো স্লটের অনুমোদন না দেয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় হাজার হাজার হাজীর হজে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। একদিকে বিমানের শতকোটি টাকা ক্ষতি, অন্যদিকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পবিত্র ইচ্ছার অপমৃত্যু- যা জাতি কখনো সহজে মেনে নিতে পারে না।

আমাদের দেশের অধিকাংশ হজে গমনেচ্ছুদের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছরের কোটায়। যাপিত জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে হজযাত্রীদের লালিত স্বপ্নের এমন মৃত্যু হবে, তা তারা কখনো চিন্তাও করেনি। সুতরাং বলা যেতেই পারে, প্রতিবছরই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এমন গাফিলতির শিকার হন এসব ধর্মপ্রাণ মানুষ।

বাংলাদেশের হাজীরা শুধু যে ফ্লাইট সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগেন তা কিন্তু নয়। তারা সাধারণত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে হজে গিয়ে থাকেন। সাধারণত এসব এজেন্সির মাঠ পর্যায়ের মোয়াল্লেম বা মধ্যস্থতাকারী কোনো হুজুর থাকেন। এই হুজুর বা আলেমরা অনেকেই অনেক সময় অর্থের লোভে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে নির্ধারিত টাকার চেয়ে অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে। আবার এমন কথাও শোনা যায়, হুজুর বা মোয়াল্লেমরা প্রথমে নানা সুবিধার কথা বললেও পরে তার কোনো কিছুই বাস্তবে দেখা যায় না। বাংলাদেশের হাজী ক্যাম্প থেকে শুরু করে মক্কা-মদিনার সব জায়গাতেই হাজীদের থাকা-খাওয়া থেকে কোরবানি পর্যন্ত অনিয়ম ও দুর্ভোগের চরম পরীক্ষা দিতে হয়। হাজীরা যেহেতু একমাত্র আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্য সেই মহান প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পবিত্র মক্কা ভূমিতে গিয়ে থাকেন সেহেতু তারা শত কষ্টের পরও টুঁ-শব্দটিও করেন না। মোটামুটি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েই তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ধর্মপাগল এসব আল্লাহর মেহমানদের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে হজের প্রতিটি পর্যায়ে এমনটা আমরা কখনো আশা করি না। বর্তমান সরকারের অনেক জায়গায় ঈর্ষণীয় সফলতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পাল্লাও অনেকাংশে ভারী। যেহেতু বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র সেহেতু ধর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীক্ষè দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়াও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব হজ এজেন্সির মধ্যে কর্মরত থাকা দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist