কে শোনে কার কথা
এ কেমন নির্দেশ, যার কোনো কার্যকারিতা নেই। সব আদেশ নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পরপরই তা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কেউই তার এই আদেশ অথবা নির্দেশকে তোয়াক্কাই করেন না। ‘করিলে তা নিশ্চয়ই পালিত হইত’। আমাদের ধর্মমন্ত্রী। নিশ্চয়ই একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি আদেশ করেছেন। কিন্তু তার কথার গুরুত্ব দেননি কেউ। হজ এজেন্সিগুলোকে দ্রুত হজযাত্রী পাঠানোর নির্দেশ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি বেশ কিছু এজেন্সি।
তারা বলছেন, অনেক টাকা খরচ করে তালিকায় নাম লিখিয়ে তারা ব্যবসায় এসেছেন। আগে পাঠালে পোষাবে না, তাই অপেক্ষা করছেন। তবে ছাড়পত্র পেতে কোথায় কত টাকা তারা খরচ করেছেন-এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। একথাও সত্য যে, ৩৭৭ হজ এজেন্সি ভিসা পেয়েও যাত্রী পাঠাচ্ছেন না। তাদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পেছনের কারণ জানা না গেলে এ রহস্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। উদ্ঘাটনের জন্য প্রয়োজন এক অসাধারণের। যারা হজ এজেন্সিগুলোর ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি করেন তারাই কেবল এর জবাব দিতে পারবেন।
হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণে ইতোমধ্যেই চরম বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ বিমান। শুধু ফ্লাইট বাতিলের কারণেই বিমানের আজ অবধি ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। সামনের দিনে এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা কী বলবেন, এ ক্ষতির দায় কে নেবে? ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অব্যবস্থাপনার জন্য ভুগতে হচ্ছে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ দায় কেন দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে! একটি মন্ত্রণালয়ের অযাচিত অব্যবস্থাপনার দায় গোটা জাতিকে কেন বহন করতে হবে?
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনিশ্চয়তার ফাঁদে আটকে পড়ে কাঁদতে হচ্ছে অনেক হজযাত্রীকে। ২৬ আগস্ট হজ ফ্লাইটের শেষ সময়। আমাদের জানা নেই, এসব বর্ষীয়ান হজযাত্রীর চোখের পানি আদৌ থামবে কি না। তবে এটুকু জানি, শেষ পর্যন্ত ধর্মের মাঝেও দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মন্ত্রণালয়ও সেই দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পেল না। যদি মন্ত্রণালয় দুর্নীতিমুক্ত হতো, তাহলে এজেন্টরা মন্ত্রণালয়ের প্রতি এতটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার সাহস পেত না। আমরা মনে করি, অন্তত এই মন্ত্রণালয়কে পাপমুক্ত রাখাটা খুবই জরুরি। কোনো ধর্মীয় কারণে নয়। লক্ষাধিক বর্ষীয়ান হজযাত্রীর হজযাত্রাকে স্বাভাবিক ও সুন্দর করার জন্য আমাদের এ আবেদন।
"