বেয়াদবি মাফ করবেন
ছোটবেলা থেকে আদব-কায়দা শিখতে শিখতে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। শেষ বিকেলের সূর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছি, ফলাফল কী? সূর্য বলেছে, শূন্য, শূন্য এবং শূন্যের সঙ্গে শূন্যকে যোগ করে দেখ। আমি কেবল অস্তগামী পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকতে... থাকতে... দেখলাম, নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘর, ভেঙে পড়ছে মাটি, হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে সমাজ।
বেয়াদবি মাফ করবেন। এ রকম সমাজব্যবস্থার প্রতি আদব-কায়দা দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আজ আর মনে করি না। এ রকম ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতেও ঘৃণাবোধ হয়। শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়ন কবরস্থান থেকে গাতির পাড়া মাদরাসা। ব্যবধান আধা কিলোমিটার। এলজিইডির অর্থায়নে রাস্তা হবে। টেন্ডার হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে বরাদ্দ হয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ টাকা। কথা সেখানে নয়। গৌরীসেনের টাকা। যত খুশি খরচ করতে পার, অসুবিধার কোনো বালাই তোমাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তা ধসে পড়লে কি মেনে নেওয়া যায়!
না, মেনে নেওয়া যায় না। পোতাজিয়া ইউনিয়নের কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের মাঝে চালানো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই রাস্তার বিভিন্ন অংশে ধস নেমেছে। চলাচল করার মতো অবস্থাও ভেঙে পড়েছে। অন্তর্জ্বালায় পুড়ছে শাহজাদপুর।
এ চিত্র শুধু শাহজাদপুরের একার নয়। মানচিত্রের যেখানে তাকাবেন, সর্বত্র একই ছবি। ব্যতিক্রম দু-একটা থাকলেও থাকতে পারে, তবে তা কখনোই উপমা হবে না। সম্প্রতি হাওরে যে বন্যা হয়ে গেল সেখানেও কার্বনকপি। বাঁধ বানানো এবং মেরামতে অনিয়ম। ক্ষতি! ১১ লাখ টন ফসলকে পানির তলে রেখে আসতে হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে লাখো পরিবারের স্বপ্নের পালতোলা নৌকার গোলাভরা ধান। এখানেই শেষ নয়। জলাবদ্ধ দুই মহানগর। যেখানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত পাঁচ বছরে ব্যয় করেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। গত দুই যুগে ঢাকা ওয়াসাও ব্যয় করেছে হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দূর হয়নি জলাবদ্ধতা। একইভাবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মাস্টারপ্ল্যান গত ২২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার নামে ব্যয় হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। ফলাফল? পোতাজিয়ার আধা কিলোমিটার রাস্তা। এই হচ্ছে বাস্তবতা।
এ বাস্তবতায় একটি রাষ্ট্র বেশি দিন চলতে পারে না। আমরা এই বাস্তবতার বিপরীত কোনো বাস্তবতা দেখতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান প্রধানমন্ত্রী এ কাজে এগিয়ে এলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমাদের
বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা।
"