দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
অনলাইন
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ
আউটসোর্সিং বা অনলাইনে সেবাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যতম অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই)-এর সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এক্ষেত্রে ভারত অন্যসব দেশের চেয়ে এগিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ এবং তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র।
অনলাইনে শ্রমদান বা কাজের ক্ষেত্রে ভারত ২৪ শতাংশ অধিকার করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১২ শতাংশ অধিকার করেছে। পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি এবং স্পেনও বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সে কাজ করা এবং ডিজিটালি তা ছাড় করানোর বৈশ্বিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে এবং এই বাজার দ্রুত বাড়ছে। শীর্ষ পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিখন ও অনুবাদ গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কাজের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের চারটি বৃহত্তম প্লাটফরম থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তাদের এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বপরিসরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থানে থাকা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চিত্রই তুলে ধরেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত প্রথম স্থানে থাকলেও দুই দেশের জনসংখ্যার বিশাল পার্থক্য বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশই সার্বিক বিবেচনায় এগিয়ে।
দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে আউটসোর্সিং কাজের পরিধি। কয়েক বছর আগেও আউট সোর্সিং-এর বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম ছিল না। সেখানে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে দ্রুত সমৃদ্ধ হবে আমাদের আউটসোর্সিং সংস্কৃতি। ভারতে এমনকি আমাদের দেশের ছাত্ররাও আউটসোর্সিং কাজ করছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধার সুযোগ নেই। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নেই ইন্টারনেট সংযোগ। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বিদ্যুৎসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধানতম খাতে পরিণত হতে পারে আউটসোর্সিং খাত।
সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বিপিও ক্রমেই জোরদার হতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপিও খাত মাত্র ৩০০ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এই খাতে তিন হাজার কর্মী কাজ করছেন। এই খাত ক্রমেই ব্যবসায়িক খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে এক লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে এবং ১০০ কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশে বিপিওর যথাযথ প্রসার ও এর গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে গত বছরের ২৮-২৯ জুলাই দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট-২০১৬’। নিঃসন্দেহে এই সামিট বাংলাদেশে বিপিও প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণরা বিপিও সম্পর্কে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাংলাদেশে বিপিও একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিপিও’র বাজার বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলার। সেখানে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারেনি। জানা যায়, বাংলাদেশ সবে মাত্র ১৮ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখলে আনতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি বিপিও খাতে যথার্থ নজর দেয়, তবে সহজেই শত শত কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারে। পোশাক শিল্প খাতের মতো বিপিও খাতও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে মিশন শুরু হয় বর্তমান সরকারের আমলে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী অবস্থান তারই সুফল। আশা করা হচ্ছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে এ খাতটি। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি বাংলাদেশের সার্বিক বিকাশেও অবদান রাখবে। অগ্রগতির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হলে মধ্যআয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি পথ দেখাতে সক্ষম হবে। উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সোপান তৈরিতেও তা অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
"