মামুনুর রশীদ

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

মতামত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন

বর্তমান সরকারের মেয়াদ এখনো এক বছর বাকি আছে। এই সময়ে দেশে যে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, সেগুলো সম্পাদন করাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য। নির্বাচন আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ শুরু হচ্ছে। কিভাবে জনতার ম্যান্ডেটে নিজেকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় সে চেষ্টা চলছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির ধরনও পাল্টেছে। এখন নির্বাচন করতে হলে বা জনপ্রতিনিধি হতে হলে তার আগে নিজেকে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হবে। এবার পরিচিতি আর যোগ্যতা ছাড়া মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কথা অনুযায়ী যদি কাজ হয়, তাহলে জনগণ পাবেন তাদের কাক্সিক্ষত জনপ্রতিনিধিকে। আর যদি যোগ্যতার পরিসর নড়চড় হয় তাহলে জনগণের হাতেই থেকে যাবে পাঁচফোড়ন।

গণতন্ত্রের মূল কথা অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সাংবিধানের ভাষাও সেটাই। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি ভোটের মূল্য অনেক। ভোটার ভোট দেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন জনগণের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করার জন্য। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং প্রতিশ্রুতি দেন জনগণের সেবা করার। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তা আর ঠিক থাকে না। নির্বাচিত অনেক প্রতিনিধি প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে হয়ে পড়েন নিজের পকেটের উন্নয়নের জন্য। প্রচলিত এই রীতি এখন মোটামুটি সবারই জানা। তাহলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন? এটা সকলেরই প্রশ্ন! বাংলাদেশে একটি দল কখনই টানা দুইবার ক্ষমতায় থাকেনি। এবারই প্রথম। দেশের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে কি না সেটার বিচার করবে সাধারণ জনগণ।

জনগণের ন্যায্য প্রাপ্তি ও আশাআকাক্সক্ষা পূরণের দায়িত্ব জনপ্রতিনিধির। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত, যিনি মাটি ও মানুষের প্রাণ এবং দেশের প্রতি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে। এমন কাউকে যদি দলে ভেড়ানো যায় তাহলেই হয়তো সম্ভব জনগণের রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান ফিরিয়ে আনা। জনগণ চিন্তায় বিভোর থাকেন এক দিনের রাজত্ব নিয়ে। আর জনপ্রতিনিধি চিন্তায় থাকেন নিজের পকেটের রাজত্ব¡ নিয়ে। একজন দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন জনপ্রতিনিধির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ হবে প্রথম লক্ষ্য। তাদের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট নির্মাণ। গরিব অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেওয়া। তাদের আশা বা হতাশার কথা শোনা। অভুক্ত মানুষের মুখে খাবারের ব্যবস্থা করা। একজন জনপ্রতিনিধির উচিত নিজেকে জনগণের কাছের মানুষ হিসেবে তৈরি করা। জনগণের সমস্যা মানেই জনপ্রতিনিধির সমস্যা। আর সেগুলো সমাধানের দায়িত্ব জনপ্রতিনিধির। একই সঙ্গে আপনি (জনপ্রতিনিধি) একজন সংসদ সদস্য বা কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখাও আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকারের ভাবমূর্তি কোনোভাবেই যেন নষ্ট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এসব কিছু নিজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানে হলো আপনি একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি। আমরা যারা ভোটার তারা এক দিনের জন্য বাদশাহ বনে যাই। নির্বাচনের সময় টাকা দিয়ে ভোট কেনার স্বভাবটা আমাদের সকলকেই বর্জন করার সময় এসেছে। দেশে উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করেই একজন দেশপ্রেমিককে নিজেদের প্রতিনিধি করে পাঠানোর গুরু দায়িত্বও কিন্তু জনসাধারণের।

২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব হওয়ার ইচ্ছা যাদের মনে জাগ্রত হয়েছে, তাদের সবাই এখন থেকেই ওপর মহলে লম্পঝম্প শুরু করেছেন। এই দৌড়ঝাঁপের সময় কি আর এখন আছে? তদবির, টাকা-পয়সার লেনদেন অতঃপর মনোনয়ন? এটাই যদি হয়! তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার যে টানা দুই বছর উন্নয়ন করল তার প্রমাণ কোথায়? জনগণ কি তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? নাকি এসব উন্নয়ন তাদের কাজে আসেনি?

দেশের অর্থনীতি এগিয়েছে। এগিয়েছে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ (১৬০২ মার্কিন ডলার)। বেড়েছে প্রবৃদ্ধি ৭.২৪ শতাংশ। কমেছে দারিদ্র্যের হার। শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশেরও বেশি। গড় আয়ু বেড়েছে পুরুষের ৬৯.৪, মেয়েদের ৭২ বছর। তার মানে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।

‘জাতের মেয়ে কালো ভালো, নদীর পানি ঘোলা ভালো’ কথাটি একবারেই খাঁটি। একজন অসহায় মানুষের কাছে শেখ হাসিনা ঠিক এ রকমই। সমালোচকরা কখনো উন্নয়ন আর ভালো কাজের কথা বলেন না। কারণ তাদের একটাই কাজ-কিভাবে নিজেকে ফলোআপ করা যায়। নিজেকে আলোচনায় রাখা যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাবনাগুলো আসলে কী, তা কি অনুধাবনের চেষ্টা আমরা করি? দেশ ও দশের উন্নয়ন মানে তো আমার আপনার সবারই উন্নয়ন। জনগণ নিশ্চয়ই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের খোঁজখবর রাখছে। তারা নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটাবেই। এবার আসা যাক নির্বাচন কমিশনের দিকে। বড় একটি রাজনৈতিক দল ভয় পাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে। ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ’ দেখলেও নাকি ভয় পায়। এই রাজনৈতিক দলটিও কি সে রকমই। রাজনীতি হলো এক প্রকার হার-জিতের খেলা। এখানে দুর্দান্ত পারফম্যান্সই আপনাকে বিজয়ী করবে। আর সেটা জনগণের মুখের হাসি মানে একজন রাজনীতিবিদের মুখের হাসি হবে- এটাই তো ঠিক। গণতন্ত্র মানে কিন্তু একে অপরকে সাহায্য করা। অবশ্যই সেটা দেশ ও দশের স্বার্থে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ২৩ মে একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। ইসি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চায়। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।

ইসির রোডম্যাপের পরই রাজনীতি এখন আর ইনডোরে নয়, সম্পূর্ণভাবেই আউটডোরে শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে টিকিট কেটে খেলা দেখার। আবার টিকিট কেটে খেলা করার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেটার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আওয়ামী লীগ করবে। কিন্তু বিএনপি সেটাকে অস্বীকার করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিরত থেকে দলটি নিজেদের অবস্থা সঙ্কীর্ণ করে ফেলেছে। নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার নিয়ে কমিশন তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তো কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তাহলে বিএনপির ইভিএমে আপত্তি কেন? ইসি তো তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তারা এটা ব্যবহারের জন্য তৈরি, তবে সব দল যদি রাজি না হয়, তাহলে তারা ইভিএম ব্যবহার করবে না। বিএনপি হয়তো আগের চেয়ে কিছুটা কৌশলী হতে চাইছে। কিন্তু ভয় একটাই, শেখ হাসিনা। অন্য কিছুতে নয়। এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার না বলে আওয়ামী লীগের সবাই বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের আগ্রহ রয়েছে বেশ। কূটনীতিকদের আলোচনা। তাদের দেশের সহযোগিতার আশ্বাস সবকিছুই মাথায় রেখে সামনে এগোতে হবে। বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর দিকেও তাকাতে হবে। তাদের সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ না করেও তাদের নিয়মতান্ত্রিকতাকে আমরা গ্রহণ করতেই পারি। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বুদ্ধিজ্ঞান হওয়া থেকে জেনে আসছি বিএনপি আওয়ামী লীগের সম্পর্কটা দা-কুড়ালের। উভয় দলই দেশের ভালো চায়। বিশ্ব দরবারে নিজেদের উঁচু আসনে রাখতে চায়। গন্তব্য একই হলে প্রতিহিংসা কেন? নিজেরা নিজেদেরকেই তো সবচেয়ে বড় সহযোগিতা করতে পারি। কানে পানি না ঢুকিয়ে সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করাই হবে সবার জন্য মঙ্গল। একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনই পারে জনগণের মুখে প্রকৃত হাসি ফিরিয়ে দিতে।

লেখক : সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist