গণদেবতার খোঁজে
চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খোলা কল সেন্টারে ৩০ ঘণ্টায় প্রায় ৩২ হাজার ফোনকল এসেছে। ২২ হাজার ১১২ জন নাগরিক এসব কল করেছেন। এই সংখ্যাই বলে দিচ্ছে চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতা কতটুকু। এই ২২ হাজার ১১২ জনের মধ্যে দক্ষিণের নাগরিক ১ হাজার ৪৩০ জন। বাকিরা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং দেশের অন্যান্য জেলার বাসিন্দা।
মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, ৩৩৬ জন সরাসরি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছেন। এর মাঝে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১৬৬ জনকে। পরামর্শ চেয়েছেন ১৪৫ জন। অনেক দেরিতে হলেও উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। অন্তত আমরা বলতে পারছি যে, দক্ষিণের মেয়র সাধারণ নাগরিকদের দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশনের ভূমিকা! মেয়র আনিসুল হকতো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টাঙানোর কাজ তার নয়। এই ঘৃণিত বাক্য ব্যবহারের জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছেন। সমালোচনার তীব্রতা সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে তিনি আমজনতার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। এ ক্ষমা চাওয়ার মাঝে আত্মশোচনা কতটুকু ছিল, তা জানা যায়নি। তবে ঘটনার পরে তাকে মশা মারতে কামান দাগাতে দেখেছেন নগরবাসী। তাতে নগরবাসীর কতটা উপকার হয়েছে জানা না গেলেও গণমাধ্যম বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কল সেন্টারে ৩০ ঘণ্টায় ৩২ হাজার ফোন এসেছে। যারা ফোন করেছেন, তাদের কেউই প্রেমালাপ করার জন্য ফোন করেননি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে কল সেন্টারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
এখানেই উত্তর আর দক্ষিণের পার্থক্য। একজন আছেন ব্রাহ্মণপাড়ায় বর্ণশ্রেষ্ঠদের সেবায় নিয়োজিত, অপরজন হরিজনদের সেবায়। বস্তুত ব্রাহ্মণপাড়ায় সরকারি বা বিনামূল্যে দেওয়া সেবার প্রয়োজন পড়ে না। তারা রিলিফ গ্রহণে অভ্যস্ত নন। উপঢৌকন গ্রহণ করাকেই তারা শ্রেয়তর মনে করেন। যে গ্রহণের মধ্য দিয়েই আজ তারা কুলীন। তবে এখানে একটি কথা না বললেই নয়, সমাজব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। নিকট ভবিষ্যতে আরো বদলে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। হরিজনদের দেশে কেউ যদি ব্রাহ্মণসেবক হয়ে হরিজনদের দরোজায় এসে বলেন, ‘আমি একজন ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ হয়ে আপনাদের দরোজায় এসেছি ভিক্ষা চাইতে। আমাকে একটি ভোট ভিক্ষে দেবেন।’
সম্ভবত কেউই এখন আর দেবতাকে ভোট দিতে আগ্রহী নন, তারা গণদেবতাকেই খুঁজে পেতে আগ্রহী।
"