মাহফুজ আল মাদানী

  ২৪ জুলাই, ২০১৭

ধর্ম

জ্ঞান অর্জন বনাম আলোকিত সমাজ

জানা, বোঝা, উপলব্ধি করাই হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞান হচ্ছে আত্মার এমন এক শক্তি ও যোগ্যতার নাম, যা দ্বারা ব্যক্তি ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে। জ্ঞানার্জনের জন্য আল্লাহপাক আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘পড় তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা আল আলাক্ব : ০১)। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমের প্রথম আয়াতে পড়ার কথা উল্লেখ করে জ্ঞানার্জনের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া মানবজাতিকে অন্য সব জাতি থেকে জ্ঞানের কারণে মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই, জ্ঞানার্জন অতীব গুরুত্ববহ একটি কাজ।

জ্ঞান প্রধানত দুই প্রকার। ধর্মীয় জ্ঞান এবং দুনিয়াবি জ্ঞান। জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ’। (ইবনে মাজাহ)। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোন ধরনের জ্ঞানার্জন করা ফরজ এবং এর পরিমাণ কতটুকু? তার উত্তরে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদরা বলেন, এখানে ফরজ বা আবশ্যক জ্ঞানার্জন দ্বারা দ্বীনি বা ধর্মীয় জ্ঞানার্জন উদ্দেশ্য। দৈনন্দিন জীবন চলার জন্য একজন মানুষের পক্ষে ইবাদত এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যতটুকু জ্ঞানার্জন না করলে সঠিকভাবে জ্ঞানার্জন অসম্ভব ততটুকু জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ তথা আবশ্যক। কেউ কেউ বলেছেন, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, হারাম, হালাল, মুবাহ, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদির জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজে আইন।

জ্ঞানের মর্যাদা সর্বদা সবখানে উচ্চাসনে আসীন। তাই জ্ঞানীর ক্বদর, সম্মান কোথাও ভূলুণ্ঠিত হয় না। জ্ঞানের মর্যাদা বর্ণনায় আল্লাহর বাণী, ‘যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা’ (সুরা আল মুজাদিলাহ : ১১)। জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ হতে এক মহান দান। এটা বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিরাট করুণা। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দেওয়া হয়েছে’ (সুরা আল বাক্বারা : ২৬৯)। যারা জ্ঞানী-বিজ্ঞানী তারাই তো জানেন। আর যারা জানে তারাই তো প্রভূত কল্যাণের অধিকারী। আর যারা জানেন এবং যারা জানেন না, তারা কখনো সমান হতে পারে না। আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘যারা জানেন এবং যারা জানেন না তারা কি সমান? (সুরা আয যুমার : ০৯)। অর্থাৎ তারা কখনো সমান হতে পারে না। এতে স্পষ্টই বোধগম্য যে, জ্ঞানের মর্যাদা উচ্চাঙ্গে। তাই তো প্রবাদ বাক্যে রয়েছে, ‘মুর্খ বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রুও উত্তম’। জ্ঞানের মর্যাদা এতই যে, যাকে ইচ্ছা তাকে দেওয়া হয় না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের সূক্ষ্ম জ্ঞান দান করেন’ (বোখারী)।

জ্ঞানার্জন করা মানে আল্লাহর পথে চলা। আর জ্ঞানার্জনকারীর সম্মানে আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের পাখা বিছিয়ে রাখেন। প্রার্থনা করে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকুল। গভীর পানির মাছও জ্ঞানার্জনকারীর জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আবুদ দারদা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে, এর উসিলায় আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতের পথসমূহ হতে একটি পথে পরিচালিত করেন। নিশ্চয়ই জ্ঞানার্জনকারীর সন্তুষ্টির জন্য ফেরেশতারা তাদের পাখাসমূহ বিছিয়ে দেন। আর আলেমের জন্য আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবাই ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি গভীর পানির মাছও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। সুতরাং একজন আবেদের ওপর আলেমের মর্যাদা তেমনি, যেমন পূর্ণিমার রাতে সব তারকার ওপর চাঁদের মর্যাদা। নিশ্চয় আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ কোনো দীনার এবং দিরহামের উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। বরং তারা শুধু ইলিম তথা জ্ঞানকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন। সুতরাং যে জ্ঞানার্জন করল সে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ করল’। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী)।

জ্ঞানার্জন হতে হবে শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া জ্ঞানার্জন করলে কিয়ামত দিবসে তা কোনো উপকারে আসবে না। যেদিন জান্নাতে যাওয়ার আশা পোষণ করবে সবাই সেদিন জান্নাত পাওয়া দূরের কথা বরং জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এমন ইল্ম শিক্ষা করে যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় সে-ই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। পক্ষান্তরে যে দুনিয়ার কোনো সামগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে তা শিক্ষা করল কিয়ামত দিবসে সে জান্নাতের সুগন্ধি তথা গন্ধও পাবে না’। (আহমদ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

একজন আবেদের চেয়ে একজন আলেম তথা জ্ঞানার্জনকারী উত্তম। তাইতো জ্ঞানার্জন করা নফল ইবাদত করার চেয়ে মর্যাদাবান। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সারারাত জেগে থাকা (এবং নফল ইবাদত করা) হতে উত্তম’। (দারেমী)।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist