ডাকঘরও ধুঁকছে
ধুঁকছে শব্দটির সঙ্গে আমাদের যেন পরম আত্মীয়তা। পত্র-পত্রিকা খুলতেই ধুঁকছে শব্দটি কদাকার দাঁত বের করে আমাদের লক্ষ্য করে হাসতে থাকে। লজ্জার ভান্ডারে সম্ভবত আমাদের আর কোনো জমা নেই। তাই সেই কদাকার হাসির সঙ্গে আমরাও সুর মিলিয়ে হাসতে থাকি। বলতে থাকি, ‘মোদের কপালডাই ইমন’।
আসলে কি তাই! হয়তোবা হ্যাঁ, হয়তোবা না। তবে পত্রিকা বলছে, এ দেশে ৯ হাজার ৮৮৬ ডাকঘর ধুঁকছে। দেড় দশকে চিঠি বিলির সংখ্যা কমেছে ২০ কোটি। গড়ে প্রতি বছর লোকসান ২০০ কোটি টাকা। তবু চলছে আমাদের ডাকঘর। আছে ডাক হরকরা। ডাকবাক্সগুলোও চোখে পড়ে। তবে কোথাও কোনো গতি নেই। অনেকটাই যেন জড় এবং স্থবির।
কেন এই স্থবিরতা?-এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, প্রযুক্তির সঙ্গে পুরনো ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারছে না ডাক বিভাগ। ডিজিটাল যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে সভ্যতার বুক থেকে চিঠি লেখার বিষয়টি যেন উধাও হয়েছে বহু কাল। চারপাশে যা কিছু আছে, সব কিছুকেই ডিজিটাল নামের এই প্রযুক্তি স্পর্শ করতে পারলেও ডাক বিভাগকে করতে পারেনি। দুর্ভাগ্যটা ডাক হরকরার, ডাক বিভাগের, না রাষ্ট্রের-তা বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে। কেননা সেই প্রতিষ্ঠানকে সময়মতো বিবেচনায় নেওয়া হলে আজ সে আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান না হয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত। কিন্তু তাকে তা হতে দেওয়া হয়নি।
কে দেয়নি, কেন দেয়নি-এসব প্রশ্নের অবতারণা না করেই বলা যায়, ডাক বিভাগের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়েছে। মানি অর্ডারে টাকা পাঠানো এখন মৃত ইতিহাস জানা সত্ত্বেও রাষ্ট্র ডাক বিভাগের এই পদ্ধতিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার পেছনে এক পিস কোরামিনও ব্যবহার করেনি। মানি অর্ডারের বদলে মোবাইল ফোনে টাকা ট্রান্সফারের বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশজুড়ে ৯ হাজার ৮৮৬টি স্থায়ী ডাকঘর থাকার পরও এ উপেক্ষার কারণ আমাদের জানা নেই। আমরা যেটুকু জানি, তাহলো অফিশিয়াল চিঠি ও ডকুমেন্ট পাঠাতে কুরিয়ার সার্ভিসের প্রয়োজন হয়। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ডাক বিভাগই হতে পারে অদ্বিতীয়। এখানে একটি তথ্য উল্লেখ না করলেই নয় যে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডাক বিভাগের বাৎসরিক আয় ছিল ৭২ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশে এর চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত; যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। দেশবাসী রাহুর গ্রাস থেকে ডাক বিভাগকে মুক্ত দেখতে চায়। আশা করি, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কল্যাণের কথা চিন্তা করে সরকার ইতিবাচক ভূমিকার মধ্য দিয়ে ডাক বিভাগকে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবে-এটাই প্রত্যাশা।
"