মোহাম্মদ হাবিব হাসান

  ২২ জুলাই, ২০১৭

উন্নয়ন

রোল মডেল বাংলাদেশ

গত আট বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা, শিক্ষার হার ও মান উন্নয়ন, শিশু ও নারীসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সড়ক, রেল, নৌ-যোগাযোগ ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষির বিকাশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। চলমান উন্নয়ন পক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সহযোগিতা এবং যথাযথ সমন্বিত উদ্যেগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। এ ছাড়াও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে।

অর্থ, বাণিজ্য ও পরিকল্পনা

গত তিন বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৫ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সাহসী ও দূরদর্শী পরিকল্পনা।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

শিক্ষা

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মওকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯ লাখ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকায় একটি অটিস্টিক একাডেমি স্থাপনের জন্য পৃথকভাবে দুটি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে যেখানে প্রতিটিতে ১০০ জন অটিস্টিক শিশুর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। অটিজমবিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদের আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমে দেশের অটিস্টিক ছেলেমেয়েদের কল্যাণে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন

বিভিন্ন সূচকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ুু ৭১.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লাখে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। ৬৪টি জেলা হাসপাতাল ও ৪২১টি উপজেলা হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মা ও নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার উচ্ছেদে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কার দিয়েছে। একই বছরে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স। একসঙ্গে কোনো একটি বিভাগ থেকে এত নিয়োগ দেশে এটাই প্রথম। শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই রেকর্ড নেই।

কৃষি, খাদ্য ও শিল্প

২০১৫-১৬ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৯১.০৫ লাখ টন। উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ২৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৩০ শতাংশ ভর্তুকিতে যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য ১৭২.১৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাওর অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবরাহের জন্য ১০.৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত তিন বছরে খরা, বন্যা, লবণাক্ততা সহনশীলসহ রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং উচ্চ ফলনশীল ৭০টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকদের জৈবসার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করার ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬.২৩ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোক মৎস্য খাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। রূপকল্প ২০২১ অর্জনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫.৪৮ লাখ টন মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দুই বছরে প্রায় ১৬৫ হাজার টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হয়েছে এবং ১.৬১ লাখ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে ৯.৫ হাজার কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ ব্লু গ্রোথ ইকোনমিতে বাংলাদেশকে পাইলট কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ৬৯.৭০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৮.৬ লাখ টন ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লাখে উন্নীত হয়েছে।

সেতু, রেল, নৌ ও স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো

পদ্মা সেতুর মূল সেতু এখন প্রায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। মোট ৪১টি স্পানের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে প্রকল্প অঞ্চলে এসে পৌঁছেছে। মাওয়া পয়েন্টের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ আর জাজিরা পয়েন্টের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণে চীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক উদ্বোধন হয়েছে গত জুলাই মাসে। একই সঙ্গে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থানচি-আলিকদম মহাসড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর ওপর কাজীর বাজার সেতু, মাদারীপুরে সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমা সেতু, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া সড়কে বিরুলিয়া সেতু, আড়িয়াল খাঁ সেতু, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু, কলাতলী সেতুসহ বেশকিছু সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় : উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। ব্যক্তি, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য সবাইকে আত্মনিয়োগ করা। সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা। হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে থেকে উন্নয়ন নীতি-কৌশল সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্ভাবনাময় শিল্প খাত উন্নয়নে সঠিক নীতি-কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা। সম্পদের সুষম বণ্টন করা। বিদেশিরা যাতে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে সে জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। বিশ্ব দরবারে দেশকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। পুঁজিবাজারের সমস্যা দূর করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের আস্থা তৈরি করা। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে অধিক চাঙ্গা রাখা। আর এসব কর্মকা-কে ইতিবাচক পথে পরিচালনার মধ্য দিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।

লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist