বিলিভ ইট অর নট
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৩২ লাখ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। কেবল যানজট একাই তার উদরে টেনে নিচ্ছে এই শ্রমঘণ্টা। টাকায় যদি ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ করা হয় তাহলে তা দাঁড়ায় বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা। তথ্য বিশ্বব্যাংকের।
৩২ হাজার কোটি টাকাকে টাকা মনে করেন না এমন মানুষও এ দেশে আছেন। তাদের জন্য এ খবর খুব একটা চমক এনে দিতে না পারলেও এই যানজট নিয়ে আরো একটি খবর আছে, যা তাদেরকে কিছুটা হলেও বিচলিত করবে। তারা হয়তো জানেন না, এ শহরে যে যানবাহন চলাচল করে তাদের গড় গতি ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার। বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। ১৩ বছর আগেও ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার।
এখানেই শেষ নয়। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি সাত থেকে নেমে আসবে চারে অর্থাৎ তখন গাড়ির গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার; যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। আর ২০৩৫ সালে এ শহরের জনসংখ্যা হবে সাড়ে তিন কোটি। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমস্যা সমাধানের কথা বলতে গিয়ে অনেকে অনেকভাবেই পরামর্শ দিয়েছেন। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেছেন, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি (প্রাইভেট কার)। তাদের মতে, রাজধানীতে বাস ও মিনিবাসের চেয়ে সাত গুণ বেশি প্রাইভেট কার চলাচল করে।
আবার কারো কারো মতে, বর্তমান ঢাকার আয়তনের ৪০ শতাংশের সমান পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা। এ অঞ্চলের এলাকা মূলত গ্রামীণ। যা শহরের গুলশানের মতো উন্নত ও আধুনিক এলাকার মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে পূর্ব ঢাকার উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা শহরের আয়তন বৃদ্ধি পেলে যানজটের তীব্রতাও হ্রাস পাবে। তবে আমরা মনে করি, এটাই সুন্দর সমাধান নয়। শহরের ভেতরের আয়তন বৃদ্ধি করলে সমস্যার সাময়িক সুরাহা হতে পারে, তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে হলে এ শহর থেকে অনেক প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে এবং তা ঢাকার বাইরে। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করি না। সরকার ও নগরবিদরা এই পরামর্শকে বিবেচনায় নিলে দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস।
"