এস এম মুকুল

  ২১ জুলাই, ২০১৭

ভালোমন্দ

সমকালের কড়চা

বন্যা-নদীভাঙনের বিপর্যয় : জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নদীর ভাঙন স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবার যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙন অতীত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকলেও নদী রূপ নিয়েছে তীব্র স্রোতে এ বসতভিটাসহ ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তীরবর্তী এলাকাবাসী। এভাবে ভাঙনের কবলে পড়েছে শত শত পরিবার। সাধারণ মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। কখন যেন শেষ সম্বলটুকুও চলে যায় নদীগর্ভে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। নদীভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে আবাদি জমি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা।

মন্তব্য : বর্ষায় বন্যা ও নদীভাঙন যেন প্রতি বছরের নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ঋতুবৈচিত্র্যে নদীমাতৃক গ্রামবাংলায় বর্ষার চরিত্র এমনই। বরং জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফল হিসেবে এ ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা। যেমন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় বাঁধগুলো যথাসময়ে নির্মাণ হয় না এবং এগুলো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করাও হয় না। তার ওপরে কাজে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়ম তো আছেই। অপরদিকে বন্যা মোকাবিলায় সময়োচিত প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ কোনোটাই বাস্তবায়ন হয় না। এবারকার বন্যা, হাওরডুবি ও অন্যান্য এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সে রকম প্রস্তুতি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আছে বলে দৃশ্যমান হচ্ছে না। মুখে ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে ত্রাণমন্ত্রী সব রকম প্রস্তুতি থাকার কথা বললেও বিপর্যয়ের ভোগান্তি থেকে জনগণ পরিত্রাণ পাচ্ছে না-এটাই বাস্তবতা। হাওরডুবি ও বন্যার দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণ মন্ত্রণালয় সার্বিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এজন্য জনগণ খুবই সংক্ষুব্ধ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাও দৃশ্যমান। এই দুই মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন-এটাই প্রত্যাশিত।

মোবাইল ফোন কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি : গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল দেশের শীর্ষস্থানীয় চার মোবাইল ফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে সিম পরিবর্তনের নামে নতুন সিম বিক্রির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এনবিআরের আপিলাত ট্রাইব্যুনাল দাবিকৃত দুই হাজার ৪৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন। সূত্র জানায়, এখন তিন মাসের মধ্যে তাদেরকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ তাদের রয়েছে। আরো জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একই কায়দায় ৮৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য : হরিলুটের ব্যবসা করছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। গ্রাহকের সঙ্গে বহুমুখী প্রতারণার মাধ্যমে দেশের জনগণের টাকা বিনা হিসাবে কেটে নিয়েও তারা কেন ভ্যাট ফাঁকি দেয়-এই দুর্বলতা তো এনবিআরের। এনবিআরের দাবি অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের ফাঁকিই সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটির কাছে দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলালিংকের কাছে ৫৩২ কোটি টাকা, রবির কাছে ৪১৪ কোটি ও এয়ারটেলের কাছে ৭৯ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। আর সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করায় এর সঙ্গে সুদের অর্থ যুক্ত হলে তা আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই মোবাইল ফোনওয়ালারা হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সরকারকে বিভিন্ন সময়ে সহায়তা তহবিলে দান করতে দেখে হাসি পায়। সরকারের প্রশাসন যন্ত্র কি তাহলে জেগে জেগে ঘুমায়!

ইকোপার্ক, ওয়াকওয়ে : রাজধানী ঢাকার তিনটি নদীর তীরভূমিতে ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়েসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সৌন্দর্য ও নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ওয়াকওয়ের রুট চূড়ান্ত হয়েছে। রুটটি হবে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক হয়ে তেরমুখ পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ওয়াকওয়ের সঙ্গে তিনটি ইকোপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, বসার বেঞ্চ, ফুডকোর্ট ও প্রয়োজনীয় টয়লেট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সবুজায়নে বৃক্ষ রোপণ ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন করা হবে।

মন্তব্য : এত সুন্দর পরিকল্পনা ভাবাই যায় না। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে নদীর তীর বেদখলে যাওয়া ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া থেকে হয়তো রক্ষা পাবে। সবুজায়ন কর্মসূচিতে দেশীয় বৃক্ষ যেন গুরুত্ব পায়। ফলজ বৃক্ষ লাগাতে পারলে খুব ভালো হয়। রাজধানীর মানুষ নদীর তীরে অবসর বিনোদনের আরেকটি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবে আশা করা যায়। সরকারকে সাধুবাদ জানাই, পাশাপাশি সরকার যেন সতর্ক নজরদারির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, যাতে দুর্নীতি সৌন্দর্যের অর্ধেক টাকা না খেয়ে ফেলে।

কালো তালিকায় মজুদদারি : বাজারে চাল না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুদ করেছিলেন মিল মালিকরা। এতে বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এ কারণে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। চুক্তি করার পরেও সরকারকে চাল না দেওয়ার কারণে ১৬ হাজার মিল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী তিন বছর এসব মিল মালিকের থেকে চাল নেওয়া হবে না। সরকারের এ পদক্ষেপকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন মিল মালিকরা। তারা বলেন, দেশের ১৬ হাজার মিল কালো তালিকাভুক্ত করলে সরকারকে চাল দেওয়ার মতো কোনো মিল থাকবে না।

মন্তব্য: এসব মজুদদারের সঙ্গে দফারফা করেই বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রী ও প্রশাসনযন্ত্র তাদেরকে মাথায় তুলেছে। হঠাৎ করে টাইড দিতে গেলে আবার যেন খাদ্য সংকটে পড়তে না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, কে জানে। কারণ গত সামরিক সমর্থিত সরকারের কড়াকড়ির ফলে এসব মজুদদার ঐক্যজোট হয়ে ধান-চাল নদীতে ফেলে দিয়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যকে অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। তার ফলে ওই সরকারেরই পতন হয়। সুতরাং আগে আপস করে ভাগ খেয়ে যেন ওদেরকে চাইলেই একসঙ্গে শায়েস্তা করা কতটা সম্ভব বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

বিমান কেন ডুবছে : সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ উড়োজাহাজ লিজ বাণিজ্যে ডুবছে বিমান। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটিকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে এ বাণিজ্য। লিজের যৌক্তিকতা প্রমাণে সংস্থাটি নিজস্ব বেশকটি এয়ারক্রাফট পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করে রেখেছে। বহরের নিজস্ব উড়োজাহাজ বসিয়ে রেখে ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ চালানো হচ্ছে। এতে বিমানের আয় কমে দিন দিন ব্যয় বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এবারও হজের জন্য এয়ারবাস লিজ নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। লুটপাটের মাধ্যমে নিজদের আখের গোছাতে ব্যস্ত একটি সিন্ডিকেট পেছন থেকে এসব করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ভুল চুক্তির কারণে মিসরের ইজিপ্ট এয়ারলাইনসের একটি এয়ারক্রাফট ও একটি ইঞ্জিন না চালিয়েও ভাড়া ১৬৬ কোটি টাকার বেশি অর্থ দিতে হবে লিজদাতাকে। এর আগে নাইজেরিয়ার কাবো নামের একটি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে বিমানকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ গুনতে হয়েছিল। এয়ার আটলান্টা নামের একটি এয়ার সংস্থার কাছ থেকে বিমান লিজ নিয়ে এক বছরে ৫৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লোকসান দিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিটি উড়োজাহাজ লিজের সঙ্গে বিমানের বড় ধরনের ক্ষতি জড়িয়ে আছে। এর পরও থামছে না লিজ বাণিজ্য। অভিযোগ আছে, খোদ ফিন্যান্স বিভাগের একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে এ লিজদাতাদের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা। মূলত মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এ বিভাগের কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তা প্রতি বছর বিমানের বারোটা বাজাচ্ছেন। এর সঙ্গে বিমানের প্রকৌশল, পরিকল্পনা ও ফ্লাইট অপারেশন শাখার দুর্নীতিবাজ বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা জড়িত।

মন্তব্য : আশ্চর্য লাগে, বিমান তো উড়বার কথা, বিমান কেন ডুববে! বাংলাদেশ বিমান বা এয়ার লাইনস নিয়ে এমন তেলেসমাতি, তুঘলকি কান্ড-কীর্তির কথা বহু বছরের পুরনো। বলতে দ্বিধা নেই, বিমানের সিন্ডিকেট নিঃসন্দেহে সরকার যন্ত্রেও চেয়েও অধিক শক্তিশালী। হাস্যকর ব্যাপারটি হলো-যারা

এমন অথর্ব লোকসানি চুক্তিগুলো করছেন তারা কি করে বহালতবিয়তে স্ব-পেশায় থাকেন, এ কথার মানে বুঝি না। প্রচলিত আছে বাংলাদেশ বিমান সংস্থাটির সুইপারও কোটিপতি। হবেইবা না কেন। যেখানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নিজেদের অর্থ লোপাটের স্বার্থে লোকসানি চুক্তি করে বছরের পর বছর সরকারের টাকা গচ্চা দেওয়া হয়। সেখানে নি¤œশ্রেণির কর্মচারীরাও তো দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকা কামিয়ে নেবে খুব সহজেই।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist