রোডম্যাপ বিতর্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা বাজারে এসেছে। বাজারজাত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পথনকশার চাহিদা কতটা তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে, একবারে খারাপও বলা যাবে না। এমনিতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত মনে হলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এখনো পর্যন্ত মাঠে সে উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। সম্ভবত বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। তবে রোডম্যাপ নিয়ে যেসব বিরোধের জন্ম হয়েছে তার মাঝে চারটি বিষয়কে প্রাধান বিরোধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক আগে থেকেই এসব বিষয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে। এই নিয়ে দলগুলো তাদের মতামত ইতোপূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসিকে জানিয়েছে। পথনকশা বা রোডম্যাপের প্রশ্নে ভিন্নমত রয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিতর্কিত বিষয়ের সমাধান না করেই রোডম্যাপ বা পথনকশা প্রকাশ নির্বাচনী রাজনীতিতে আবার নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাল।
পথনকশা বা রোডম্যাপে যেসব বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা; নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার নাকি স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হবে। বিতর্ক রয়েছে, সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে। এ ছাড়াও নির্বাচনী আইন সংস্কারও বিতর্কের বাইরে নয়। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব থাকে। ইসি এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চায়। আলোচনার মধ্য দিয়েই নির্বাচন কমিশন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চায়। তবে নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল পথনকশা বা রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই মূল বিতর্কগুলোর সমাধান করা এবং সেভাবেই ঘোষণা করা। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এই মতভেদ দূর করার লক্ষ্যে কিংবা বৈপীরত্বকে সমান্তরালে নামিয়ে আনার জন্য ইসি সবার জন্য একটি দম নেওয়ার জায়গা রেখেছে। আর সেটিই হচ্ছে আলোচনা। আলোচনা শেষে কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে। কোনটা মানা হবে আর কোনটা মানা হবে না এই নিয়ে দলগুলো বাইরে সোচ্চার হলে কমিশনের সংলাপ সফল হবে না। আমরা একটি সফল সংলাপের প্রত্যাশায় রইলাম।
"