প্রতিবারের ঈদ তথৈবচ
নাড়ির টান থাকলে মানুষকে বাড়িতে যেতেই হবে। না থাকলে কেউ যাবে না। কম থাকলেও যাবে, তবে তা মাঝেমধ্যে। পলিবিধৌত এ অঞ্চলের মাটির চরিত্র কিছুটা হলেও ভিন্ন। গ্রহণের ক্ষমতা অনেকের চেয়ে বহুলাংশেই বেশি। বিশ্বাস না হলে পরখ করে দেখার অনুমতি রইল। অনুমতি শব্দটি ব্যবহার করার কারণ বিশ্বাসের দৃঢ়তা।
প্রমাণের জন্য বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। প্রতি ঈদে আমরা তা অবলোকন করে থাকি। শুধু ঢাকা শহর থেকেই এক কোটিরও বেশি মানুষ নাড়ির টানে ছোটে দেশের বাড়িতে। কী অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে মানুষ ছুটে যায় তার ভালোবাসার বৃত্তে। খুঁজে পায় বিনি সুতোয় গাঁথা সেই বন্ধনের দৃঢ়তা। ইংরেজিতে যার নাম বন্ডেজ।
ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। বাসে, ট্রেনে কিংবা লঞ্চে কোথাও যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। তবুও মানুষ বাড়িতে যায়, যেতেই হয়। মায়ের হাতে শাড়িটা ঠিক সময়ে তুলে দিতে পারলেই শান্তি। এ শান্তির যেন কোনো তুলনা হয় না। শাড়িটা হাতে নিয়ে মায়ের মুখটা যখন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, মনে হয় পূর্ণিমার আলোতে ঘরটা থইথই করছে। এ সুখ কারো সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায় না। স্বর্গীয় ভালোবাসাকে কি স্পর্শ করা যায়!
অনুভবে অনুভবে তুলে নিতে হয় কবিতার পঙ্ক্তিমালা। তাইতো প্রতিবারের ঈদযাত্রাকে নির্দ্বিধায় বলা যায় ‘তথৈবচ’। ‘তথৈবচ’ হলেও এ তথৈবচ যে কতটা গর্বের, যাদের নাড়ির টান আছে কেবল তারাই অনুভব করতে পারেন, বলতেও পারেন। বিবর্জিতদের এ বোধ থাকে না। তারা বন্ধনহারা এক উদ্বাস্তু মানব। ঘরের মধ্যে বসবাস করেও এদের কোনো ঘর নেই। ঘরের মধ্যে বসবাস করেও এরা আজীবন উদ্বাস্তু।
রাজা আসে রাজা যায়। কিন্তু সামাজিক চিত্রের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। ‘তথৈবচ’কে পাল্টে দিতে পারেনি কেউ। পারেনি কেউ বললে কিছুটা অসত্য বলা হয়। প্রকৃত সত্যটা হলো, কেউ সততার সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে পাল্টে দিতে চাননি অথবা চেষ্টাও করেননি। আর সে কারণে কয়েক কোটি মানুষকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষে ফি বছরই পোহাতে হচ্ছে কঠিন দুর্ভোগ। কিন্তু কেন! কেন সাধারণ মানুষ এ দুর্ভোগের বোঝা বহন করবে?
যে ছেলেটি মায়ের জন্য কেনা শাড়িটি বুকের মাঝে আগলে রেখে বাড়ির দিকে ছুটতে গিয়ে পথের মাঝে দুর্ঘটনায় মারা গেল, মায়ের কাছে পৌঁছানো হলো না..., শাড়িটি তখনো হয়তো তার হাতের সঙ্গেই জড়ানো ছিল-এর কী উত্তর দেবেন! আমাদের কারো কাছে এর উত্তর জমা নেই। শুধু এটুকুই জানি, এদের মৃত্যুটি সাধারণ নয়, অপমৃত্যু। কাউকে না কাউকে এ মৃত্যুর দায় বহন করতে হবে। আজ অথবা কাল।
"