ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন

  ২৪ জুন, ২০১৭

বাড়ি ফেরা

সড়ক-মহাসড়কে এক নজর

এবারের ঈদযাত্রা সম্পর্কে কেউই আশার বাণী শোনাতে পারছে না। যোগাযোগমন্ত্রীর মুখেও ধ্বনিত হয়েছে হতাশার কথা। টানা বৃষ্টিপাত রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই বেসামাল করে ফেলেছে যে, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য কার্যত কোনো সুখবর নেই। ঈদযাত্রা জোরেশোরে শুরুর আগেই গত কয়েক দিন দেশের মহাসড়কগুলোতে যানজটের যে আভাস মিলেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

যানজটে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়ক। দেশের উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে গত দুই দিন থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চার লেনের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২২ জেলার ৯২টি রুটে অন্তত ১২-১৩ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করছে।

ঈদকে সামনে রেখে যাত্রী সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ি অবাধে চলছে। এসব গাড়ির কোনো কোনোটি বিকল হয়ে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করছে। সরু রাস্তা আর খানাখন্দের কারণে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। এমন অবস্থা কমবেশি অন্যান্য মহাসড়কেও।

এদিকে চলতি বছর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাট হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক ২ লেন থেকে ৬ লেনে উন্নীতের কাজ শুরু হয়েছে। মহাসড়কের কাজে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক গাড়ি মালামাল লোড-আনলোড করায় বর্তমান ২ লেনের সড়কে এবারের ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হবে। মহাসড়কেই গাড়ির দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। তার সঙ্গে মাটির কাজ চলায় অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গভীর ঢালের। ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেই রয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকি। রয়েছে কর্দমাক্ত পরিবেশও। ভাঙ্গা, মালিগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে রয়েছে অস্থায়ী বাজার।

জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরার কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গত কয়েক বছরের ঈদসহ সারা বছরই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও এবার অনেকটাই স্বস্তি রয়েছে। এই বৃষ্টির মাঝেই মহাসড়কটির টেকেরহাট থেকে মোস্তফাপুর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটারে তড়িঘড়ি করে সংস্কার নামক জোড়াতালি চলায় লক্কড়ঝক্কড় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বৃষ্টির মধ্যে কাজের মান নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। বরইতলা থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশ ও মোস্তফাপুর থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার অংশে আগেই সংস্কার হওয়ায় পরিস্থিতি সহনীয়। মাত্র দুই লেনের অতি ব্যস্ত এই মহাসড়কের রাজৈরের কালীবাড়ির বিপজ্জনক মোড়টি ডিভাইডার দিয়ে ৪ লেনের কাজ শেষ পর্যায়ের সংবাদটি স্বস্তির হলেও এখনো রয়ে গেছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। দুই লেনের সরু অতি ব্যস্ত মহাসড়ক জুড়েই এজিনের পাশের মাটি সরে যাওয়ায় চরম দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।

সম্প্রতি এ রুটে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও ২০ জন যাত্রী আহতসহ প্রতিনিয়ত ২ লেনের সরু এই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ও অঙ্গহানি ঘটে।

দেশের অভ্যন্তরীণ সড়কের বেশিরভাগেরই বেহাল দশা। কোনো কোনো সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ইট সুরকি উঠে গিয়ে একাকার। সামান্য বৃষ্টিতে অনেক সড়কে কাদাপানিতে ডুবে থাকে। এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। ঈদুল ফিতরে এসব সড়ক দিয়ে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। ফলে বেহাল সড়কের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে অনেক বেশি।

দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৮০ ভাগ সড়কেরই বেহাল দশা। তার পরও যানবাহন চলছে অনেকটা বাধ্য হয়ে। ঈদের মধ্যে আরো ঝুঁকি নিয়ে চলবে এসব যানবাহন। এলজিইডির আওতাধীন সড়কেরও বেশিরভাগ পিচ উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে আবার অনেক সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে, সেগুলো নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া সড়কে বড় বড় গর্ত ও বিপজ্জনক খানাখন্দ মেরামত করতে হবে।

রাজধানী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ ৭২টি মহাসড়কে ঈদের সময় মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ যাতে কম থাকে সেদিকে নজর দিলেও আঞ্চলিক সড়কে মহাদুর্ভোগে পড়তে হবে মানুষকে। এছাড়া জেলা পর্যায়ের সড়কগুলোর আরো করুণ দশার কারণে ঈদের সময় মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। বেহাল সড়কের কারণে একদিকে যেমন তৈরি হবে ভয়াবহ যানজট। অন্যদিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষের সীমাহীন কষ্ট বেড়ে যাবে।

ঈদ যাত্রায় বরাবরই থাকে পথের বাধা। বেহাল সড়ক-মহাসড়ক ঘরমুখী মানুষের বিড়ম্বনার কারণ হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এখনই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো এ মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হয়নি। অন্যদিকে বংশাই নদীর সেতু দেবে গেছে। ফলে এখন থেকেই বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যাত্রীদের ভুগতে হবেÑএমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

e-mail: [email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist