মাহমুদ আহমদ

  ২৩ জুন, ২০১৭

ধর্ম

রোজা শেষের আনন্দ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কৃপায় আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২৭তম দিনের রোজা রাখার সৌভাগ্য আমরা লাভ করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক তৌফিক দান করলে আর মাত্র দুদিন পরেই (চাঁদ দেখা গেলে) আমরা ঈদ উদ্যাপন করব, ইনশাল্লাহ।

ঈদ কী : ঈদ শব্দটি আরবি, এর বাংলা অর্থ খুশি, আনন্দ, আনন্দোৎসব ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা, খাওয়া ইত্যাদি। তাহলে ঈদুল ফিতর এর অর্থ দাঁড়ায় রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ। মুসলিম উম্মাহ বছরে দুটি ঈদ পালন করে থাকে আর তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। একটি আসে পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে আর অপরটি আসে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান কোরবানির স্মৃতিরূপে পশু কোরবানির মাধ্যমে। মুসলিম উম্মাহ ঈদ আল্লাহপাকের শোকরানাস্বরূপ আদায় করে থাকেন। একজন আল্লাহপ্রেমিক মাত্রই তার সব আনন্দ খোদার সন্তুষ্টির সঙ্গেই যুক্ত করেন। তাই একজন প্রকৃত আল্লাহপ্রেমিক খোদার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ পেলে শোকরানা আদায় করে থাকেন আর ঈদ আমাদের সেই শোকরানা আদায়ের সুযোগ করে দেয়। তাই সকলে মিলেমিশে শোকরানাস্বরূপ দুরাকাত নামাজের মাধ্যমে ঈদ পালন করে মুসলিম উম্মাহ।

ঈদুল ফিতর : আল্লাহপাকের খাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে যে ঈদ আসে তা হলো ঈদুল ফিতর। একজন রোজাদারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হলো খোদাতায়ালার আদেশ অনুযায়ী মাসব্যাপী রোজা রাখতে আল্লাহ তাকে তৌফিক দিয়েছেন। এ খুশি প্রকাশ করতেই রমজান মাস শেষ করে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদের আনন্দে মিলিত হয়। আর এই দিনটির মাধ্যমে আল্লাহপাক মুমিনের জন্য সব বৈধ খাবার-পানীয় ও কাজকর্ম যা কি না রোজার কারণে বিরত রেখে ছিলেন তার অনুমতি প্রদান করেন।

ঈদের চাঁদ : মুসলমানদের জন্য ঈদের চাঁদ অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত। কারণ চাঁদের হিসেবেই ঈদপর্ব শুরু হয়। রমজান মাসের শেষ দিন মুসলমান মাত্রই হোক সে বৃদ্ধ, যুবক কিংবা শিশু, চাঁদ দেখা বা চাঁদের খবর নিতে উৎসুক দেখা যায়। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.)-ও ঈদের চাঁদ দেখার জন্য উৎসুক থাকতেন। তিনি (সা.) চাঁদ দেখা মাত্র এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনে ওয়াল ঈমানে, ওয়াস্ সালামাতে, ওয়াল ইসলামে, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহু হিলালুর রুশদিউ ওয়া খাইর’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ) তোমার ও আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ। হে আল্লাহ! এ চাঁদ যেন সঠিকপথের ও কল্যাণের চাঁদ হয়। (ইমাম তিরমিজি)। তাই আমাদের উচিত হবে ঈদের চাঁদ দেখে উক্ত দোয়াটি করা, এই চাঁদ যেন আমাদেরকে আল্লাহপাকের পথে নিয়ে যায়।

ঈদের তাকবির : ঈদের চাঁদ অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর তাকবির পড়তে হয়Ñআল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। অর্থ : আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সব প্রশংসা আল্লাহ্র। এই তাকবির ঈদুল ফিতরের চাঁদ ওঠার পর থেকে ঈদের পরদিন আসর পর্যন্ত এবং ঈদুল আজহার সময় জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজের পর হতে ১৩ তারিখ আসর নামাজ পর্যন্ত উচ্চৈস্বরে কমপক্ষে তিনবার করে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পাঠ করতে হয়। এ ছাড়া ঈদের নামাজ পড়ানোর পর ইমাম সাহেব উচ্চৈস্বরে পাঠ করেন আর ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া ও আসার পথে এ তাকবির পাঠ করা উচিত। মহানবী (সা.) এবং সাহাবীগণ (রা.) এমনটি করতেন।

ঈদের আগে ফিতরা আদায় : ঈদের আগে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী, শিশু এমনকি সদ্য জন্মলাভকারী শিশুর জন্যও নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা জরুরি। ফিতরার টাকা দিয়ে গরিব, অসহায় দুস্থরা অন্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করে থাকেন। যেহেতু ফিতরার টাকা দিয়ে দুস্থ অসহায়রা ঈদ করেন, তাই ঈদের কিছুদিন আগে এই টাকা আদায় করা সবচেয়ে উত্তম। এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরিব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ফিতরা দেওয়া কারো ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরার সাহায্য দেওয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। সকলের অংশগ্রহণের ফলে সদকাতুল ফিতরের ফান্ডটি একটি সাধারণ ফান্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হন তাদের মনে হীনম্মন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না। মূল বিষয় হলো ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরিব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি। যাদেরকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরিব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন, এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দেবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

ঈদে যাওয়ার প্রস্তুতি : ঈদের অনুষ্ঠান সাধারণত খোলা আকাশের নিচে অথবা জামে মসজিদে হয়ে থাকে। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) ঈদগাহ যাওয়ার জন্য ভিন্ন রাস্তা ও ফিরে আসার জন্য ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন যেন অনেক বেশি লোকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যেন তাদের খোঁজখবর নেওয়া যায়। আমরাও এ কাজটি করতে পারি, আর এর ফলে সবাইকে ঈদের আনন্দে শামিল করা যাবে। এ ছাড়া ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সম্ভব হলে নতুন পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে উপস্থিত হতে হয়।

ঈদের তোহফা : পবিত্র ঈদ উপলক্ষে ঈদী বা ঈদের উপহার বিতরণ করা মুসলমানদের মধ্যে চালু হয়ে আসছে। ঈদের খুশিতে আত্মীয়-অনাত্মীয় পরস্পরকে তোহফা বিনিময় করে থাকেন, এটা একটি ভালো রীতি। এতে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়, ভ্রাতৃত্ববন্ধন সুদৃঢ় হয়। কাপড়-চোপড়, দ্রব্যাদি, টাকা-পয়সা ঈদের তোহফা হিসেবে বিতরণ করা হয়ে থাকে। অনেকে তৈরি খাবার, মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন। অনেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কুশলাদি বিনিময় ও তোহফা বিতরণ করে থাকেন, আর এসবের মাঝেই একজন আল্লাহপ্রেমিক খুঁজে পান তার রবের সাক্ষাৎ।

ঈদের নামাজ : ঈদের নামাজের মাধ্যমেই ঈদের প্রকৃত আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঈদের সব প্রস্তুতি মূলত আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে শোকরানাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ পড়ার মাধ্যমে। সকালের দিকে খোলা মাঠে অথবা মসজিদে এই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে আজান ও আকামত নেই। দুই রাকাত নামাজে সর্বমোট ১২টি তাকবির দিতে হয়। প্রথম রাকাতে সুরা কারাত শুরু করার আগে সাতটি তাকবির অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলতে হয় তারপর যথারীতি প্রথম রাকাত পুরা করে দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে পাঁচটি তাকবির দিয়ে যথারীতি নামাজ শেষ করে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর খুতবা প্রদান করতে হয়। খুতবা শেষ হলে ইজতেমায়ী দোয়া করে সবাই মোলাকাত করতে থাকেন। ঈদ আনন্দে সকলে বুকে বুকে মিলে একাকার হয়ে যায়।

ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য মূলত মহান আল্লাহপাকের কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করে তারই ইবাদতের মাধ্যমে শোকরানা আদায় করে এটাকে বাস্তবে প্রকাশ করা। তাই এই আনন্দ শুধু খুশি বা মজার জন্য নয়, বরং আপন প্রভুর বান্দা হিসেবে স্থায়ীভাবে ইবাদত প্রতিষ্ঠায় রত থাকা। আমরা যেন ঈদের আনন্দে খোদার সন্তুষ্টিতে সর্বদা জীবনের জন্য স্থায়ী ইবাদত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নেই। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সদা সর্বদা তার শোকরানা আদায় করার তৌফিক দিন, আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist