পাহাড়ধস রোধে চাই সমন্বিত উদ্যোগ
বাংলাদেশে মোট ভূমির আনুপাতিক হারে যেখানে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার, সেখানে সরকারি হিসাবে ১৭ ভাগ দেখালেও আছে মাত্র ৯ ভাগ। ফলে কঠিন পরিবেশ বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে হচ্ছে দেশকে। বিশেষ করে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পড়ছে এর বৈরী প্রভাব। গত প্রায় দুই দশকে বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবনহানিসহ যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে দেশকে, তা সামাল দেওয়া সহজ হবে না।
পরিবেশবিদদের মতে, পাহাড়ে নির্বিচারে বন উজাড়, ভূমির ধরন পরিবর্তন করে ইচ্ছামতো বাগান তৈরি, মানুষের অপরিকল্পিত পুনর্বাসন এবং অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি পাহাড়কে নাজুক করে তুলেছে। অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের পরিবেশ এতটাই দুরবস্থায় পৌঁছেছে, সেখানে এক যুগে প্রায় ৬১ শতাংশ ঝরনা শুকিয়ে গেছে। যেটুকু বহমান আছে, তাতেও স্বচ্ছ পানির প্রবাহ নেই। এতেই বোঝা যায়, পাহাড়ের পরিবেশ আর স্বাভাবিক নেই। পাহাড়ে সেই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে পার্বত্যাঞ্চলে যেমন উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি সেখানে যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তখন পাহাড়ধস হলেও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটবে না কিংবা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে না। তবে ভবিষ্যতে পাহাড়ধসের মতো বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপ ছাড়া কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা সঙ্গত হবে না। এছাড়া দেশের অধিকাংশ পাহাড় পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। সেক্ষেত্রে মানুষের অজ্ঞতাপ্রসূত কর্মকা- পাহাড়ধসকে ত্বরান্বিত করছে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পাঁচটি জেলায় পাহাড়ধসের ঘটনায় যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, এবারকার প্রলম্বিত বর্ষায় যদি তা অব্যাহত থাকে, তাহলে দুর্যোগের মাত্রা আরো বাড়বে। অতএব প্রাণহানি রোধসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের পরিবেশ অত্যন্ত বিপর্যয়কর। এছাড়া সাধারণভাবে দৃশ্যমান নয় এমন অনেক ঘটনাও পাহাড়িদের জীবনে ঘটে চলেছে। আসলে বন-পাহাড় সংরক্ষণ এবং পাহাড়ি অঞ্চলের উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলাচ্ছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে পাহাড়ে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপাশি পাহাড়ে যারা বসবাস করে, তাদেরকেও সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে। আর এসব বিষয়ে একমাত্র সরকারই পারে নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো দুর্যোগে সমাজের দুর্বলতর মানুষই বেশি মারা যায়। তাদের রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, তারাও এ দেশের মানুষ। আমরা মনে করি, পাহাড়ধস রোধে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনসহ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আর যেভাবে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে, তা যেকোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। এর পাশাপাশি নতুন বনভূমি সৃষ্টি করতে হবে। তা যত দ্রুত হবে, ততই মঙ্গল। আমাদেরও এমনটাই প্রত্যাশা।
"