জান্নাতুল বাকী

  ১৫ জুন, ২০১৭

আন্তর্জাতিক

তরবারি নৃত্যের মাঝে

সৌদি আরব কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটা সৌদি আরব বুঝবে। তবে আধুনিক কাতারের পাশে যুদ্ধকালীন অনেক বন্ধুই থাকবে এবং সে কথা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলো জানিয়েও দিয়েছে। বলাবাহুল্য, ইতোমধ্যে সৌদি আরব তার নিজস্ব উপসাগরীয় এলাকায় অনেকগুলো দেশের আস্থা হারিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বসে আছে।

অস্ত্রবাজার তথা মার্কিন অর্থনীতি চাঙা করতে ট্রাম্পের দরকার অতি দ্রুত ধনিক শ্রেণির যুদ্ধ। সে পথেই ট্রাম্প হাঁটছেন। শুধু হাঁটছেন বললে ভুল হবে, বরং সৌদির সংস্কৃতি তরবারি ড্যান্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রাম্পের নাচ দেখে মনে হয়েছে, নাচের আড়ালে দৌড়াচ্ছেন একটা যুদ্ধবাজ সেনানায়ক। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প নেচেছেন নাকি নাচিয়েছেন সৌদি আরবকে? সৌদির আস্থাভাজন ট্রাম্প, তার সৌদি সফরে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার ছাপও রেখে গেলেন। ট্রাম্প জাত ব্যবসায়ী, সঙ্গে আছে ধুরন্ধর ঝানু ব্যবসায়িক শ্রেণি ও ইহুদির কূটচাল। সময়ের দাবি নিয়ে কাতারের সঙ্গে থাকা ইরানের এখন জাতীয় ইস্যু। কেননা, ইরানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক গত হজের সময় ক্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গেই ভূলুণ্ঠিত। পাকিস্তান তাদের শ্রম বাজার ঠেকাতে কাতারকে বেছে নেবে এটা সহজেই অনুমেয়। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধু সৌদিআরব এখন মার্কিনভক্ত। শিয়া রাষ্ট্রের আরেক দরদিও চাঙা অর্থনীতির দেশ কুয়েত থাকবে ব্যবসা প্রধান কাতারের পাশেই। কেননা, বহুকাল থেকে সৌদি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসা কুয়েত সরকার সৌদির আচরণে মাঝে মাঝেই মনঃক্ষুণœ। সম্পর্কের টানাপড়েনের শুরুতেই মৌনভাবে বিমান পরিবহন ব্যবসায়ী তুরস্ক থাকছে অপর বিমান পরিবহন ব্যবসায়ী কাতারের পাশে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদির ভূমিকা নিয়ে এরদোয়ানের তুরস্ক প্রশাসন দারুণভাবে হতাশ ও বিরক্ত। সৌদির নিরীহ বন্ধুর তালিকায় থাকা ওআইসির সদস্য দেশ ওমান, ইরাক যুদ্ধকালীন সময় থেকে মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষার ভূমিকায় সৌদির নীরবতাকে ঘৃণার চোখে দেখে আসছে। আরব বসন্তের দিনে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাদের সমর্থন করার কারণে কায়রো প্রশাসনের কাছে অপ্রিয় কাতার। এ ছাড়া ইহুদিপ্রেমী মিসর প্রশাসনকে এক কথায় মাস্কাট ঘৃণা করে। সব মিলিয়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে দেওয়া যেমন আমেরিকার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি সুখ-সহ্যহীনতায় ভুগতে থাকা শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক সৌদিরও দরকার অস্ত্রের প্রদর্শন করার।

অস্ত্র ও টাকা নাকি মানুষের মস্তিষ্ককে উত্তপ্ত করে দেয়। রক্তের স্রোতে তেজ আসে। আবার রক্তক্ষরণে সেই তেজ অবনমনও হয়। আর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আগের আধিপত্যের অবসান ঘটে। সৌদি আরব মুসলিম জাতির জন্মগত শ্রদ্ধাপ্রাপ্তির কারণে যদি ভেতরে ভেতরে অহমিকা থেকে থাকে, তবে নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যবসায়ী কৌশলে উন্নতি লাভ করা আজকের কাতারও হয়তো বহুদূর এগিয়েছে। সৌদির নাম ইউরোপে না থাকলেও, কাতার এয়ারওয়েজের সিল মারা ট্রাউজার পরিধান করে মেসি নেইমার সুয়ারেজের বার্সেলোনা খেলা করে প্রতিদিন। কাতারের নিজস্ব একটা ইউরোপ বন্ধুবলয় রয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্ব আসর আয়োজক হওয়ার মধ্য দিয়ে।

সৌদির হঠাৎ ট্রাম্পপ্রীতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যকেই ভাবাচ্ছে না, বরং পোড় খাওয়া অনেক দেশকেই ভাবিয়ে তুলছে। প্রতিনিয়ত আমেরিকাকে উত্তর কোরিয়া ধমক দিচ্ছে, সে ধমক হজমও করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মাঝে চীনকে সন্দেহ প্রবর বন্ধু বানাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে আমেরিকা। এদিকে চীন ভারত শীতল যুদ্ধ চলছেই, তাতে লবণের ছিটা পড়েছে মেঘালয় ব্রিজ তৈরির কারণে। আমেরিকান গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারের জন্য একটা কথাই প্রযোজ্য-মদ একই, কিন্তু বোতল আলাদা। প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয় না তাদের পররাষ্ট্রনীতি।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist