কেউ কথা রাখেনি
রোজা এলেই দাম বাড়বে। এটাই নিয়ম। কত রোজা এলো, গেল। থেকে গেল শুধু সেই অনিয়ম। অনিয়ম যত দিন থাকবে, সাধারণ মানুষের জন্য নির্বাসিত থাকবে সুখবর। এবারের রোজায়ও নির্বাসিত থেকেছে সে। রোজা শুরুর আগের দিনই নড়েচড়ে বসেছে বাজার। তরিতরকারি ও শাকসবজি থেকে শুরু করে দাম বাড়েনি এমন কোনো পণ্যের সন্ধান পাওয়া ছিল ভার। ইতোমধ্যেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাংস। বেড়ে গেছে রোজার প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। অথচ রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল হবে বলে এ মাসের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যের মজুদ আছে। সুতরাং দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৪৫ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি। কত মন্ত্রী এলো, গেল, কত কথা বলা হলো। থামল না শুধু সেই রোজার বাজার। কেবলি উঠেছে সে ওপরের দিকে। মুদ্রার বিশ্ববাজার স্থিতিশীল। চাহিদার চেয়ে পণ্যের মজুদ বেশি। কিছু পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। তবু কমেনি দাম..., এখানে..., এই দেশে। যদিও কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের কথা শুনিয়েছে সরকার। একটি অস্বাভাবিক নিয়ম কিভাবে স্বাভাবিকে পরিণত হতে পারে, এ নমুনা সংগ্রহের জন্য ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের একবার অন্তত এ দেশ সফর করতে হবে। আর এভাবে চলতে পারলে কিছুদিনের মধ্যে আমরা হয়তো গিনেস বুকে নাম লেখাতে সক্ষম হব।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি সুনীল গাঙ্গুলী তার এক কবিতায় বলেছিলেন, ‘৩৩ বছর কেটে গেছে, কেউ কথা রাখেনি।’ কবির কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি, ৪৫ বছর কেটে গেছে, কেউ কথা রাখেনি। আমরা, এই কথা না রাখার দেশেÑসংযমের মাসে, সর্বক্ষেত্রে অসংযম প্রদর্শন করেই চলেছি। বছরের এগারো মাসে আমরা যা লাভ করতে পারি না, এই এক মাসেই আমরা তা পাবার প্রত্যাশায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। ঘুষ আর দুর্নীতির মাত্রা যেন এ মাসেই বৃদ্ধি পায় সবচেয়ে বেশি। আর এ কাজে প্রশাসন প্রতিরোধে না দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করে। আমরা মনে করি, হাত প্রসারিত করার কাজকে বন্ধ করা না গেলে বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে আগামী এক শ বছরেও রোখা সম্ভব নয়। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে আমলে নেওয়া দরকার। আর এর দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।
"