ইফতেখার আহমেদ টিপু
উন্নয়ন
তথ্যপ্রযুক্তিই হবে প্রধান খাত
একবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির খোলা মাঠ। শতাব্দীর শেষার্ধেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি একবিংশ শতাব্দীর ভাগ্য নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে। মূলত তথ্যপ্রযুক্তির উত্থান বিংশ শতাব্দীতেই। বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনেও এ প্রযুক্তি অবদান রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে রফতানির প্রধান খাতে পরিণত করার স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ।
বলা যায়, এ ক্ষেত্রে শুরু হয়ে গেছে নীরব বিপ্লব। বাংলাদেশেই তৈরি হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের প্রযুক্তি পণ্য স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ। দেশে নির্মিত সফটওয়্যার দিয়েই চলবে দেশের ব্যাংক, বীমা, কলকারখানা, অফিস-আদালত। সবকিছুর দ্বার খুলতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রযুক্তি পণ্যের শিল্পাঞ্চল হাইটেক পার্ক। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি ইতোমধ্যে কালিয়াকৈরে ২৩২ একর জমিতে প্রথম হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এর বাইরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খরিতাজুরি বিলে দেশের দ্বিতীয় হাইটেক পার্ক নির্মাণে ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ার, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের সাত বিভাগের ১২ জেলায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। হাইটেক পার্কগুলো সচল হলেই আইসিটি সেক্টর জাতীয় রাজস্ব আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খুশির বিষয় হচ্ছে, প্রতিযোগিতার দৌড়ে বাংলাদেশের তৈরি তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জাম ও উপকরণ বিদেশের বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে সফটওয়্যার রফতানি করে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে দেশ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশ আসবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত হতে। প্রতিবছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি বাড়বে।
বর্তমানে দেশে ৯শ’ থেকে এক হাজার কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি করছে। এই শিল্পে কর্মরত ২৫ থেকে ৩০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। আগামী বছরের শেষ নাগাদ সফটওয়্যার শিল্পে এক লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করবে।
সারা দেশে ৫৩ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজেই সরকারি সব সেবা নিতে পারছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভূমি রেকর্ড, পরীক্ষার ফল জানতে পারা, সরকারি বিভিন্ন ফরম, মোবাইল ব্যাংকিং, জীবন বীমা, ইংরেজি শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরামর্শ ডিজিটাল হয়েছে। এখন প্রতিটি শিল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তির পদচারণা শুরু হয়ে গেছে। ব্যাংকিং সেক্টর এখন অনেকটাই অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভর। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে করপোরেট হাউসগুলোতেও।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক দূর এগিয়েছে। রূপকল্প-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বড় বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনশক্তি এ খাতে দক্ষতার পরিচয় দেবে, এমন প্রত্যাশা জাগে তাদের বর্তমান প্রাগ্রসর কার্যক্রমে। রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে হাইটেক পার্ক। উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য এখানে থাকছে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। অর্ধ শতাধিক একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে বিশ্বমানের। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও গড়ে তোলা হচ্ছে আরেকটি হাইটেক পার্ক। পাশাপাশি চট্টগ্রামকে করা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নগরী। হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে বদলে যাবে দেশের আইটি সেক্টর। এতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলতে শুরু করেছে এই সেক্টরে। দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আরেকটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস উঁকি দিচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে হাইটেক পার্ককেন্দ্রিক মানুষের কর্মসংস্থান। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক) বর্তমান সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আর এতে বর্তমান সরকার আরেকটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে। ফলে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এক দশকের মধ্যে আইসিটি হবে দেশের প্রধান রফতানি আয়ের খাত। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ যে লড়াই চালাচ্ছে সে প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে হলে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আত্মসন্তুষ্টির বদলে কিভাবে আরো এগিয়ে যাওয়া যায় সেই অনুসন্ধিৎসুতে উন্মুখ হতে হবে। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির জাদু ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে।
লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ
"