মাহমুদ আহমদ

  ২৫ মে, ২০১৭

ইসলাম

স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় আরেকটি রমজান মাস আমরা লাভ করতে যাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। চাঁদ দেখা গেলে হয়তো শনিবার দিবাগত রাতে সেহরি খেয়ে সবাই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখতে শুরু করব, ইনশাআল্লাহ। মোমিন বান্দারা পবিত্র এই মাসটির অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন। তারা শুধু ভাবেন কবে থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। রমজান মাসের জন্য আগে থেকেই তারা নিজেকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করে তোলেন। এ ছাড়া আল্লাহপাকের পবিত্র বান্দারা মাহে রমজান উপলক্ষে একটি রুটিন তৈরি করেন, যাতে পূর্বের রমজান থেকে এবারের রমজানে কী কী নেক আমল বেশি করা যায় তার ছক আঁকা থাকে। যদিও এবার রমজান শুরু হচ্ছে প্রচ- গরমে। একে তো প্রচ- রোদ, তার ওপর নেই বৃষ্টি। অন্যদিকে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। সব মিলিয়ে এক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই অনেকে ভাবছেন, এই অসনীয় গরম আর এত বড় দিনে কিভাবে রোজা রাখবেন। রোজা রাখতে গিয়ে এবার অনেক কষ্ট হবে। আসলে কষ্ট তাদের জন্যই যারা বাহ্যিক চাকচিক্যের মোহে আসক্ত। কিন্তু মোমিন-মুত্তাকিদের জন্য এটা কোনো কষ্টই নয়, বরং রমজান আসছে বলে তাদের হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত। এ ছাড়া আল্লাহপাক এমন কোনো নির্দেশ দেননি, যা পালন আমাদের সাধ্যাতীত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর চেয়েও অনেক বেশি বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে, তারপরও সেখানে মুসলমানরা রোজা রাখে। এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না, যেখানে মানুষ বৈরী আবহাওয়ার জন্য রোজা পরিত্যাগ করে। যারা রোজা রাখাকে কষ্ট মনে করছেন, তাদের বলব, আপনারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার নিয়ত করুন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, দেখবেন অতি সহজেই একটি মাস কেটে গেছে। কিভাবে দিন কেটে যাবে হয়তো ভাবতেও পারবেন না। আমরা কি মহানবী (সা.)-এর জামানার কষ্টকে ভুলে গেছি? তারা ধর্মের জন্য কতই না কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। পরনের কাপড় নেই, নেই খাবার, তারপরও তারা নামাজ, রোজা পরিত্যাগ করেননি।

রমজানে রোজা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরানে উল্লেখ করেছেন-‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের জন্য, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। তাই মন থেকে সব ধরনের দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহপাকের নির্দেশের ওপর আমল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই নিয়ত করতে হবে যে, গত রমজানে যদি একবার পবিত্র কোরান খতম দিয়ে থাকি তাহলে এবার ইচ্ছা রাখব দুইবার খতম দেওয়ার। গত রমজানের যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে না পড়তে পারি এবার ইচ্ছা থাকবে নামাজগুলো জামাতে আদায় করার। অর্থাৎ সব কিছুতেই মোমিন বান্দা চান পূর্বের তুলনায় বেশি ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকতে। তাই একজন মোমিন রমজান আসার পূর্বেই নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। বাহ্যিকভাবে আমরা যেমন স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য অনেক পূর্ব থেকেই নিজেকে গড়ে তুলি আর সব সময় মাথায় পরীক্ষায় ভালো ফলের চিন্তা ঘুরপাক খায়, ঠিক তেমনি যারা মোমিন তারা রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেক পূর্ব থেকেই তৈরি হয়ে থাকেন। রমজানের দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তা তারা আগে থেকেই ঠিক করে আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে থাকেন, যার ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদের সুস্থ রেখে রমজানে ইবাদত-বন্দেগি করতে সাহায্য করেন।

আমরা যদি এখন থেকে রমজানের প্রস্তুতি না নিই তাহলে দেখা যাবে, তারাবির নামাজে অংশ নিতে পারছি না নানান ব্যস্ততার কারণে, মসজিদে পবিত্র কোরানের দারস শুনতে যেতে পারছি না অন্য কোনো কাজের চাপে, ঠিক মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে পারছি না, রাতে দেরিতে ঘুমানোর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারছি না। এছাড়াও অনেক নেক কর্মে অংশ নিতে পারছি না। আর এভাবে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে রমজান মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। পরে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। হাদিসে পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং আন্তরিকতা আর উত্তম ফল লাভের বাসনায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পূর্বের সর্বপ্রকার পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (বোখারি, মুসলিম)। হাদিস পাঠে আরো জানা যায়, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক আর ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক। ইসলামী পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা স্রষ্টার সঙ্গে বান্দার সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যম হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ। আর এজন্যই মহানবী (সা.) হাদিসে কুদসির মাধ্যমে এরশাদ করেছেন- সম্মান ও মর্যাদার প্রভু আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের অন্য সব কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব’, রোজা ঢাল স্বরূপ। তার নামে বলছি যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে, প্রথমত সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং দ্বিতীয়ত রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভুর সঙ্গে মিলিত হয় (বোখারি)।

আমরাও যদি আল্লাহতায়ালার কাছে এখন থেকেই দোয়া করতে শুরু করি যে, হে খোদা! তুমি আমাকে সুস্থ রাখ, আমি যেন এই পবিত্র রমজানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত, কোরান পাঠসহ সব পুণ্য কর্ম অধিকহারে করতে পারি। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি ইবাদতে রত থেকে কাটানোর যদি ইচ্ছা থাকে আর খোদাকে লাভ করার আশা থাকে, তাহলে অবশ্যই এখন থেকেই নিয়ত করে সে অনুযায়ী প্রস্তুত হয়ে যাওয়া উচিত। নতুবা রমজান চলে আসবে আর মনে মনে ভাবব, হায়! রমজান মাস চলে এলো আর আমি এর জন্য তৈরিই হইনি। শুধু রোজা রাখলেই কি রমজান মাসের সার্থকতা? রোজাও রাখতে হবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতও করতে হবে। তাই আগে থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দুনিয়ার সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে অর্থাৎ যার যার কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য বা অফিসের কাজ সারিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি মতো তারাবির নামাজ, কোরান তেলাওয়াত বা দারসে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যারা ব্যবসায় করেন তারাও ঠিক করে নিতে পারেন এতটা থেকে আমাকে মসজিদে অবস্থান করতেই হবে। যারা ছাত্র রয়েছেন তারাও এখন যদি পড়ালেখা কিছুটা বেশি করেন তাহলে রমজানের ইবাদতে সুবিধা হবে। এভাবে আমরা যে যেই স্থানেই থাকি না কেন, আমরা যদি এখন থেকেই নিজেকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করে তুলি তাহলে আমরা দেখব রমজানের রাতগুলো কত সুন্দর ইবাদতে কাটে। যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তারাও এখন থেকেই ভাবতে পারেন, অন্তত রমজান মাসে বেশি মুনাফা নয়, সবাই যেন স্বাচ্ছন্দ্যভাবে সদাই কিনে রোজা পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করবেন। আর এর ফলে একজন ব্যবসায়ী যেমন আল্লার সন্তুষ্টি লাভ করবেন তেমনি লাখো মানুষ যে স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা পালন করে আনন্দ পেলেন তারও অংশীদার হবেন তিনি।

হজরত রাসুল করিম (সা.) রমজানের পূর্বে শাবান মাসে অনেক বেশি ইবাদত করতেন আর তিনি (সা.) রমজান ছাড়াও প্রতি মাসে নফল রোজা রাখতেন। আমরাও যদি তার সুন্নত অনুযায়ী প্রতি মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখতাম তাহলে আর রমজানের রোজা কোনো কষ্ট মনে হতো না। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সুস্থতার সঙ্গে এবং তার ইবাদতে রত থেকে পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো কাটানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist