কালোটাকাই যখন...
কালোটাকাই যখন চালিকা শক্তি, তখন একে আর কষ্ট দিয়ে লাভ কী! সবাই কি আর সাদা মনের মানুষ হতে পারে? সমাজে সাদা মনের মানুষের সংখ্যা যত কমছে কালোটাকার উপদ্রব ততই বাড়ছে। টাকাকে চিহ্নিত না করে আসুন, মানুষকে চিহ্নিত করি। প্রতিদিন হাত দিয়ে মশা না মেরে মশা উৎপাদনের খামারগুলো ধ্বংস করি। বলা যত সহজ করাটা তত কঠিন। তারচেয়ে, রঙের ওপর রং চড়িয়ে যে যেভাবে থাকতে চায় তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া হোক। সম্ভবত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকছে। যদিও অর্থমন্ত্রী সর্বত্রই বলছেন, আগামী বাজেটে কালোটাকা সাদা করার কোনো সুযোগ থাকবে না। কিন্তু বরাবরের মতো ‘তবে’ শব্দটি যোগ করে বলেছেন, অতঃপর নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়কে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।
স্বাধীনতার পর এ যাবৎ বাজেট ঘোষণা হয়েছে ৪৬ বার। এতে কালোটাকাকে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ২০ বার। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত কালোটাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে এ দেশে কালোটাকার মজুদ ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও বিনিয়োগের মাধ্যমে টাকা সাদা করার কোনো আগ্রহ নেই কালোটাকার মালিকদের। কিন্তু এর পরও প্রতি বাজেটেই এই সুযোগ রাখা হচ্ছে। আর এ কারণেই দুর্নীতির মাত্রা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।
আসলে কালোটাকার মালিকরা যখন জেনেই গেছে, যে অর্থনৈতিক পিলারের ওপর দেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে কালোটাকার প্রভাব আকাশছোঁয়া। অস্তিত্ববিহীন সাদার সে ক্ষমতা কোথায়! কালো ইচ্ছা করলেই বিদেশে টাকা পাচার করতে পারে, বিদেশ থেকে টাকা আনতেও পারে। কিন্তু টাকা সে আনে না, কেবলই পাচার করে। বিদেশে পাচার করেই সে তার সম্পদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে। যাদের কাছ থেকে কখনই আর দেশপ্রেমের চিহ্নমাত্রও আশা করা যায় না। আমাদের অজ্ঞতাই হোক বা অন্যকিছু হোক, তাদের কাছেই অনেক কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় তীর্থের কাকের মতো বসে থাকি আমরা।
আমরা মনে করি, এর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। কালোটাকার উৎসপথে কামান দেগে একে নির্মূল করা যেতে পারে অথবা কালোটাকার মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করে বিনিয়োগে বাধ্য করা। আর এ কাজের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।
"