দুর্নীতির অভয়ারণ্য সরকারি ব্যাংক
অবস্থা খুবই নাজুক। কার? সরকারি ব্যাংকগুলোর দিকে তাকালে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অন্যত্র যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়ে না। আট সরকারি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ১৫,৪০৭ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ৩৯,১১২ কোটি টাকা। একের পর এক আর্থিক দুর্নীতি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কর্মকা-ের ফলে খেলাপি ঋণ, মূলধন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ক্রমেই বেড়েই চলেছে। অথচ সরকার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর না করে ফি-বছর বাজেটে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ দিয়ে ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ব্যাংক কোম্পানি আইন বলছে, যদি কোনো ব্যাংকে টানা দুই বছর মূলধন ঘাটতি থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে তার কার্যক্রম চালানো থেকে সরে আসতে হবে। অর্থাৎ, কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ঘাটতির এক বছর পর থেকে জরিমানাসহ শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক চাপের কারণে পর্যবেক্ষক বসিয়েও অনিয়ম ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এ রকম পরিস্থিতি যখন সরকারি আটটি ব্যাংককে গ্রাস করতে চলেছে, ঠিক তখনই সরকার কোরামিন তুলে দিচ্ছে ব্যাংকগুলোর মুখে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে রাখা হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার মূলধন তহবিল। যে মূলধন তহবিল চলমান ব্যবস্থাপনায় কোনোভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
গত অর্থ বছরের বাজেটেও এই খাতে সমপরিমাণ অর্থের বরাদ্দ থাকলেও ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং দুর্নীতির পরিমাণ বেড়েছে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকারি ব্যাংকে কিছু গ-গোল আছে, তারা সেগুলো সমাধান করবেন। তবে মূলধন ঘাটতি পূরণের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ না দিলে এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো চলতে পারবে না। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটেও এ খাতে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু সে বরাদ্দ দুর্নীতির সাইক্লোনে কোথায় যে হারিয়ে গেছে তার কোনো হদিসই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একাধিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এ ব্যপারে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, অর্থ বরাদ্দের ফলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও দুর্নীতি বাড়বে। আমরা মনে করি, অব্যবস্থাপনার একটা বিহিত হওয়া খুবই জরুরি। এখানে নতুন করে বিনিয়োগ না করে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটন করে, তারপর বিনিয়োগ করা হোক। অন্যথায় দুর্নীতির সমুদ্রে দুই বালতি দুধ ঢেলে তাকে খাঁটি দুধে পরিণত করা সম্ভব নয়। দুই বালতি দুধেরই অপচয় হবে।
"