মাহমুদ আহমদ

  ২৩ মে, ২০১৭

ধর্ম

ইসলামই শান্তির ঠিকানা

বিশ্বজুড়ে প্রেম-প্রীতি, শান্তি, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। অন্য কথায়, মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি বিশ্বস্ততার হক আদায় এবং তার সৃষ্টির প্রতি দায়বদ্ধ আচরণের মাধ্যমে এ বিশ্ব এক স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা। অথচ এই শান্তিপ্রিয় ইসলামের ভয়েই আজ বিশ্ব শঙ্কিত। ইসলামের নাম নিলে অবশ্য এই যুগে স্বাভাবিকভাবেই ভয়ভীতিকর এক চিত্র ফুটে ওঠে। শঙ্কিত হয়ে পড়ে যারা, এ দোষ আসলে তাদের নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে তথাকথিত কিছু ইসলামী দল এবং তাদের অন্য সহযোগীরা ইসলামকে এমনভাবে কালিমাযুক্ত করেছে। ইসলামের নাম শুনলেই তরবারির ঝনঝনানি, বোমাবাজি আর আত্মঘাতী হামলার এক ছাপ মানুষের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে। অথচ ইসলামের আকর্ষণীয় ও শান্তির শিক্ষার প্রচার ও প্রসার জোর-জবরদস্তি কিংবা বল প্রয়োগে নয়, বরং সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার মাধ্যমে। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন দেওয়া যায় না, তেমনি আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভও সম্ভব নয়।

কোনোক্রমেই এ ধারণার উদ্রেক করা ঠিক হবে না যে, ইসলাম প্রচারে তরবারি প্রয়োগের নির্দেশ রয়েছে। ধর্মবিশ্বাসের বিস্তার ঘটাতে নিশ্চিতভাবেই তরবারি ব্যবহৃত হয়নি। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তরবারি ব্যবহৃত হয়েছিল-এটা সত্য, তবে ঈমানের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে অবশ্যই তরবারি কখনো ব্যবহৃত হয়নি। কারণ, ঈমানি বিষয়গুলো তো মানব হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মের টানে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়। মক্কার প্রথম তের বছর মুসলমানদের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। এমনকি, মদিনায় হিজরত করার পরও শত্রুরা তাদের ওপর চড়াও হলে সম্পূর্ণ অসজ্জিত অবস্থায় থেকেও তাদের ফিরতি-যুদ্ধ করতে হয়েছে। চাপ প্রয়োগে মুসলমান হলে কেউ কি এমন কোরবানি করতে পারে?

ইসলামে মুসলমান ও অমুসলমানের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলাম শত্রুদের সঙ্গেও দয়ালু আচরণ করে, তা শান্তিকালীন সময়েই হোক বা যুদ্ধাবস্থায়ই হোক। সর্বাবস্থায় ইসলাম অমুসলমানদের অধিকার মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করে। ইসলাম একটি যুদ্ধংদেহী ধর্ম-এটি অপবাদ ও সর্বৈব মিথ্যা। বাস্তবতা হলো, কী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছিল, যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ মুসলমানদের যুদ্ধের অনুমতি দিলেন? মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর এবং সীমালঙ্ঘন কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯০)। বিদ্বেষ ছড়ানো ও আক্রমণের অধিকার ইসলামে নেই। চড়াও হওয়া বা আক্রমণ করার অধিকার ইসলামে নেই। ইসলামের বাস্তব শিক্ষা হলো, কেবল আক্রান্ত হলেই তুমি যুদ্ধ করতে পার। অধিকন্তু, এখানে এ নির্দেশও রয়েছে যে, আক্রমণকারী বা আগ্রাসী হইও না, চুক্তি ভঙ্গকারী হইও না।

সে যুগে ইসলামবিরোধীরা পরাজিত সৈন্যদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে বিকৃত করত। এটা সমরনীতির পরিপন্থী, জিঘাংসামূলক অত্যন্ত গর্হিত কর্ম। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ। শিশু ও নারীদের হত্যা করাও নিষিদ্ধ। অমুসলিম ধর্মীয় নেতা-পাদ্রি, পুরোহিতদের তাদের উপাসনালয়ে হত্যা করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্য কথায়, যুদ্ধ কেবল সমরক্ষেত্রেই সংঘটিত হতে পারে। অথবা অন্য কোনো বিকল্প খুঁজে না পেয়ে যদি শহর বা নগরে যুদ্ধ করতে বাধ্যও হতে হয়, তবুও কেবল তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করা যেতে পারে, যারা বিরোধিতায় আগ-বাড়িয়ে অস্ত্র ধারণ করে আক্রমণ চালিয়েছে। আজ দেখা যাচ্ছে, সুন্দর ইসলামী শিক্ষার ওপর কোনো দলই আমল করছে না। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা শিশু, নারী, বৃদ্ধ, নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করছে। অপরদিকে, আগ্রাসীবাহিনী, শহর-নগর-বন্দরে বোমাবর্ষণ করছে, গুলি চালাচ্ছে, করছে অতর্কিত আক্রমণ। তারা নগরগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নগর অবকাঠামো সমূলে বিনাশ করছে। এতে নাগরিক অধিকারের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকছে না।

প্রতিটি বৃহৎ শক্তিই এখন পারমাণবিক বিপুল অস্ত্রসম্ভারের অধিকারী, এমনকি দরিদ্র দেশগুলো পর্যন্ত অস্ত্রসম্ভার মজুদকরণের এই দৌড়ে শামিল হচ্ছে। মানবজাতি একেবারে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে, যেখানে কিনা পবিত্র কোরান আমাদের নিরপরাধ, নিরীহদের কোনো ক্ষতি না করার শিক্ষা দেয়, সেখানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ তাৎক্ষণিকভাবে জানমালের বিপুল ক্ষতিসাধন করা ছাড়াও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ঘটায়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। সুতরাং এটা তো হত্যা করার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহৃত হওয়ার পর মানুষ ভেবেছিল বিশ্ব এমন এক মারাত্মক মারণাস্ত্র বানানো থেকে হয়তো বিরতই থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-সেসব অস্ত্রের প্রাণসংহারী ক্ষমতা বাড়াতে তারা আরো এগিয়ে গেছে। আর নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব সামগ্রিক ধ্বংসলীলা সাধনকারী মারণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে অস্ত্র-প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছুটেই চলছে। মূলত একজন মুসলমানের বিনাকারণে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই, যদি না তা এমন লোকদের বিরুদ্ধে হয়, যারা আল্লাহর দ্বীন পালনে ও প্রচারে বাধা দেয় অথবা বিশ্বে শান্তি বিনাশের কারণ হয়। শান্তি বজায় রাখতে এটা অনুপম সৌন্দর্যম-িত শিক্ষা নয় কি? আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরানে বলেন, আর তারা সন্ধির জন্য হাত বাড়ালে তুমিও এর জন্য হাত বাড়িয়ে দিও এবং আল্লাহর ওপর ভরসা কর। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা-সর্বজ্ঞ।’ (৮ : ৬১)। সুতরাং এটা হলো ইসলামী শিক্ষা। চরমপন্থি মতাদর্শের কোনো স্থান এখানে নেই।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে প্রকৃত ইসলামের ছায়ায় জীবন অতিবাহিত করা তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist