লাগামহীনতায় খেলাপি ঋণ
আমাদের দেশে ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিচার হয় না। শেয়ারবাজারের ঝানু প্রতারকদের প্রতারণা হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও বিচার হয় না। ক্ষমতার দাপটে বেড়ে ওঠা প্রফেশনাল ক্রিমিনালদের কখনো কখনো পুরস্কৃত করার ঘটনাও আলোচনার খোরাক হয়। অথচ ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর রুটি চোর শিশুটি ছাড়া পায় না। তাদের বিচার হয় এবং তারা শাস্তি পায়।
এই যখন চিত্র, তখন খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক। আর সে কারণেই হয়তোবা এর লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ সুবিধা দিয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন করার পরও সেই অর্থ আদায় না করে পুনঃতফসিল করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। যা ব্যাংকের মোট ঋণের সাড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি। গত মার্চে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়। এ হিসাবের বাইরে আরো ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ তথ্য যোগ করা হলে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য এক বিরাট হুমকি হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই খেলাপি হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ আদান-প্রদান করছেন, যা ফেরত আসার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা, যে উদ্দেশ্যে ঋণগুলো দেওয়া হয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার হয়নি। পাচার হয়ে যাচ্ছে ঋণের অর্থ। এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করা লুটেরা ব্যবসায়ীরাই আবার ঠিক করছেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পদে কারা বসবেন। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাও নাট্যমঞ্চের নির্বাক সৈনিকের মতো।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থঋণ ও দেউলিয়া আদালতের মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের কোনো বিচার হচ্ছে না। এ কারণে ঋণখেলাপিদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। এসব ঋণখেলাপিকে বিচারের আওতায় এনে
তাদের সম্পত্তি জব্দ করলে খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা কমে
আসতে পারে। কিন্তু দায়িত্বটা নেবে কে? বিগত সময়ে কেউ এ দায়িত্ব নেয়নি বলেই আজ খেলাপির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ। যা কখনই আমাদের কাম্য হতে পারে না।
"