ই-ভোটিং নিয়ে বিতর্ক
বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে হঠাৎ করেই দেশে শুরু হয়ে গেছে তুমুল বিতর্ক। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বক্তৃতাকালে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় আলোচনার ঝড়। এই ঝড় যেন থামার নয়; আগামী নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত হয়তো চলতেই থাকবে।
বিএনপি বলছে, ই-ভোটিংয়ে দুরভিসন্ধি আছে। এই পদ্ধতি চালু হলে ভোট কারসাজি করা সরকারের জন্য সহজ হবে। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি সরকারের ভোটারবিহীন নির্বাচন করার আরেকটি ডিজিটাল প্রতারণা কিনা, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সমস্ত বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
তবে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হলেও এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে দূর থেকে হ্যাকিং সম্ভব বলেই স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে পদ্ধতিটিকে বাতিল করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আব্দুল্লাহ বলেছেন, ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিভিএম (ডেভেলপ অনলাইন ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এজন্য ইতোমধ্যে একটি শক্তিশালী কমিটিও করা হয়েছে। তার মতে, ডিভিএম এমন একটি যন্ত্র, যেখানে কারচুপির কোনো সুযোগ থাকবে না; ভোটারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষিত থাকবে। তবে শেষ পর্যন্ত ডিভিএম চালু হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের।
গত অক্টোবরে সদ্য বিদায়ী কমিশন ১৯ জন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা ডিভিএমের সুবিধা-অসুবিধার পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত দেবে। এ ব্যাপারে কমিটিপ্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ আছে, চেষ্টা করা সত্ত্বেও যন্ত্রে ভোট দেওয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা যায়নি। তাই এটি খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। এখানে কেবল যন্ত্রের ব্যবহার রাখলে চলবে না, কাগজের ব্যবহারও থাকতে হবে।
ই-ভোটিংয়ের ব্যাপারে নানাজনের নানা মত রয়েছে। বাস্তবতা বলছে, যন্ত্রে ভোট দেওয়ার বিষয়টি প্রযুক্তিগত দিক থেকে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। আর পারেনি বলেই উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই এই পদ্ধতি ব্যবহার করেও পরে তা বাতিল করেছে। আমাদের দেশে বিষয়টিকে নতুন বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আমরা আশা করতে পারি, নির্বাচন কমিশন একটি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধের বাইরে আনতে সক্ষম হবে।
"