reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭

আন্তর্জাতিক

নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীরা ‘ফ্রি’ পড়তে পারবে?

ড. মাহবুব হাসান

নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ঘোষণা করেছেন, আগামী ফল সেশন থেকে স্টেট ও সিটির সব পাবলিক কলেজে টিউশন ফি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা তিন বছর পড়াশোনা করতে পারবে। বলা হয়েছে, এই তিন বছরে কুমো প্রশাসনের ব্যয় হবে ১৬৩ মিলিয়ন ডলার অথবা আরও কিছু বেশি। সেটা নির্ভর করছে এই কর্মসূচির আওতায় কত শিক্ষার্থী সুযোগ-সুবিধা পাবে তার ওপর। গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কলেজ-ইউনিভার্সিটিগামী ছেলেমেয়েরা এই সুযোগ পাবে যদি তাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের কম হয়। অর্থাৎ ওইসব পরিবারের আয় মাসে ১০ হাজার ডলার বা তার কম হলেই কেবল তাদের ছেলেমেয়েরা টিউশন ফ্রি সুবিধা পাবে। গভর্নর কুমোর এই উদ্যোগকে এই মহানগরীর কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের বুকে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে। তাদের লালিত স্বপ্নের কথাই যেন গভর্নর বলেছেন সেদিন।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কুইন্স ব্যুরোর লা-গার্ডিয়া কমিউনিটি কলেজে যখন তিনি এই ঘোষণা দেন, তখন তার পাশে ছিলেন ভরমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি অনেক আগে থেকেই টিউশন ‘ফ্রি’ করার আন্দোলন করে আসছিলেন। গত নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্স প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতার সময়ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টেক্কা দিতে এই বিষয়টি রেখেছিলেন প্রতিশ্রুতির তালিকায়। গরিব ও মধ্যবিত্তের প্রতি বার্নির এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পুঁজিবাদী সমাজের মানুষেরা বার্নিকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করেনি। অথচ এই স্টেটে এবং নিউইয়র্কের মতো পৃথিবীর এক নম্বর মহানগরেও যে মানুষের কি অর্থনৈতিক দুরবস্থা বিরাজ করছে, সেটা হিলারিও বুঝতে পারেননি বা চাননি।

আমেরিকার মতো দেশে গরিবদের জন্য ভালো কিছু করা সত্যিই কঠিন। কারণ এই দেশের সিটি প্রশাসন, স্টেট প্রশাসন এবং ফেডারেল প্রশাসন হোমলেস ও দরিদ্রদের বাঁচিয়ে রাখতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও, এই সমস্যার সমাধানে পৌঁছানোর মতো কোনো তরিকার সন্ধান তারা পাননি বা করেননি। মনে হয় এই সমস্যা জিইয়ে রাখা তাদের রাজনৈতিক ভিশনের মধ্যে নিহিত। এ কথা বলার পেছনে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, এখন ক্ষমতাসীন হতে যাওয়া রিপাবলিকানদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। কারণ সিনেটে ও হাউসে রিপাবলিকানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। লেজিসলেটিভরা যদি ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর প্রস্তাবটি পাস করে দেয় তাহলেই গরিব ও মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরা সরকারি কলেজ ও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফ্রি পড়তে পারবে। আর তারা যদি প্রস্তাব বা বিলটি ডেমোক্র্যাটদের বিবেচনা করে তাহলে রাজনৈতিক বিরোধিতার বলি হবে এই বিষয়টি। অর্থাৎ গরিব ও মধ্যবিত্তরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।

আমরা শিখেছি, রাজনীতি হচ্ছে বৃহত্তর জনগণের কল্যাণকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ পথরেখা তৈরি করা। কিন্তু পৃথিবীজুড়েই ঠিক এর উল্টোটাই দেখছি আমরা। আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের রাজনৈতিক সরকারগুলো গত ৪৫ বছরেও গরিব শিশুদের স্বাক্ষর করে তোলার জন্য কার্যকর দূরদর্শী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেনি। বরং তারা শিক্ষা খাতের চেয়ে সামরিক খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি রেখে চলেছে।

দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রধান শক্তিই হচ্ছে শিক্ষা। কেবল দেশের জনশক্তিকে পৃথিবীর শ্রমবাজারের উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যেও সরকারগুলোর পদক্ষেপ অত্যন্ত ধীরগতির এবং তা অদূরদর্শিতারই পরিচায়ক। তার মানে তারা অতিদ্রুত আমাদের দেশের শিশুদের স্বাক্ষর করে, শিক্ষিত করে দেশের ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের উপযোগী বা যোগ্য করে তুলতে চায় না। এর প্রধান কারণ, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ধারণাÑগ্রামের মানুষের শিশুরা যদি শিক্ষালাভ করে তাহলে তাদের রাজনৈতিক মিথ্যাচার ধরা পড়ে যাবে এবং মানুষ প্রতিবাদী হবে। শাসক শ্রেণির মনোভঙ্গি, প্যাটার্ন, রাজনৈতিক কালচার এই ধারায় চলছে। এই ধারাটি কেবল বাংলাদেশেরই নয়, অনুন্নত, স্বল্পোন্নত ও উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক অভিলাষও। পৃথিবীর শাসক গোষ্ঠীর মনোরোগ একই প্যাটার্নের অন্তর্গত। প্রত্যেকের অ্যাকশন প্ল্যান আলাদা। আমেরিকান রাজনীতিকদের, বিশেষ করে শাসক গোষ্ঠীর মনোলগ একই রকমের। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে কত ভালো ভালো বিল যে হিমঘরে নিপতিত হয়েছে, তার একটি হচ্ছে ইমিগ্রেশন বিল। এই বিলটি প্রথমে ডেমোক্র্যাটদের হলেও, পরে রিপাবলিকানরাও মিলে এটিকে বাই-পার্টিজান বিলে রূপ দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেই বিলটি অদৃশ্য ইশারায় শীতঘুম দিয়েছে। তাই এই শঙ্কা জাগছে অভিজ্ঞ মহলের মাঝে। গভর্নর কুমো যে প্রস্তাবটা দিয়েছেনÑযা বিল আকারে হাউসে যাবে, সেটা গরিবদের মনে আশা জাগানিয়া হলেও, রিপাবলিকানরা তাতে সায় দেবে কি না সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, এই বিল পাস হলে তো ডেমোক্র্যাটদের সুনাম হবে। অতএব চেপে যাও। কিন্তু এতে যে গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য একটি অসাধারণ সাহায্য-সহযোগিতার কার্যক্রম হবে, তা কিন্তু তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় আসবে না।

গরিব ও মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরা উচ্চ টিউশন ফি’র কারণে স্কুল পাস করার পর আর কলেজে যেতে পারে না। যারা স্টুডেন্ট লোন নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের সেই লোন শোধ করতে জীবনের সিংহভাগই চলে যায়। এই সুদভোগী ব্যাংকের হাত থেকে গরিব ও মধ্যবিত্তের একটি অংশকে বাঁচাতে কুমোর এই পদক্ষেপকে একটি চমৎকার প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। কেননা, প্রতি সিমেস্টারে একজন শিক্ষার্থীকে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের [সুনি] জন্য গুনতে হয় ৬ হাজার ৪৭০ ডলার। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের [কুনি] ব্যয়ও সুনির মতোই। দুই বছর মেয়াদি কমিউনিটি কলেজের টিউশন ফি ৪ হাজার ৩৫০ ডলার। কুমোর এই পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এক্সেলসিয়র স্কলারশিপ’। তবে এটা এখনও স্পষ্ট নয়, এই পরিকল্পনার অর্থায়ন কোথা থেকে হবে। কুমো সেটা পরিষ্কার করে না বললেও তার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিউশন অসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামে ইতোমধ্যেই এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই অর্থ কি টিউশন ফ্রি খাতে ব্যবহার করতে পারবেন কুমো? তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, লেজিসলেটিভদের অনুমোদন ছাড়া কি সে টাকা গভর্নর কুমো স্টুডেন্টদের জন্য ব্যয় করতে পারবেন?

লেখক : কবি, সাংবাদিক, নিউইয়র্ক প্রবাসী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist