আনোয়ারুল হক নিজামী

  ১৪ জুলাই, ২০২০

মুক্তমত

করোনা-সংকটে তথ্যপ্রযুক্তি ও যুবসমাজ

বর্তমান পৃথিবীর আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় বিশ্ববাসীর ভোরের ঘুম ভাঙে। কার জীবন প্রদীপ কবে নিভে যায়, কীভাবে নিভে যায়, কেউ জানেন না। বিশ্বব্যাপী চলছে মৃত্যুর মিছিলের দীর্ঘসারি ও দীর্ঘশ্বাস। তবু মানবজীবন থেমে থাকার নয়। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) করালগ্রাসে সমগ্র পৃথিবী আজ থমকে গেছে, থমকে গেছে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা, থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিরাট এক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে লকডাউন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স্থগিতাবস্থার বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে।

এই করোনাভাইরাস সংকট অবসান হওয়ার পরবর্তী সময় প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের সংকট। তারুণ্যনির্ভর দেশে এই সংকট মোকাবিলায় তরুণ সামাজকেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নিয়োজিত করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলেই বাংলাদেশ ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। বাংলাদেশ যখন এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই সামনে এসে দাঁড়াল বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯।

এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবকিছুই এখন সবার হাতের নাগালে। তাই তরুণরা ঘরে বসেই করতে পারে নিজের প্রয়োজন মতো দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইন কোর্স, যা তাকে সামনের সময়গুলোতে নিজেকে প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং,

বিভিন্ন ইংলিশ কোর্স, ডেটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স, বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্স, কমিউনিকেশনের দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্স, লাইফ স্কিল ট্রেনিং, কম্পিউটার এবং তথ্যভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্স, ভাষাগত বিভিন্ন কোর্স, ডাটা অ্যানালাইসিস কোর্সগুলো খুবই প্রয়োজনীয়, যা তরুণদের দক্ষ করে তুলতে সহায়তা করবে। তরুণদের প্রস্তুত করে তুলতে প্রয়োজন বিশেষায়িত বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক কোর্স। তার মধ্যে রয়েছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স, গ্রাফিকস ডিজাইনিং কোর্স, প্রোগ্রামিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট কোর্স, ভিডিও এডিটিং অ্যান্ড অ্যানিমেশন কোর্স, সফটওয়্যার স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সগুলো।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সেটা হলো উদ্যোক্তা হওয়া। নতুন সৃষ্টিশীল আইডিয়া যার মাধ্যমে অন্যের হয়ে কাজ না করে নিজে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা এবং অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। এসব বিষয়ে বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক স্টার্টআপ এন্ড এন্টারপ্রেনারশিপ কোর্স রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তারা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বাংলাদেশের এখন অনেক তরুণ এগ্রো, হস্ত, কুটির শিল্প বেইজড বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন এবং অনেকের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন যারা এই পেশায় রয়েছেন তারা অনেকেই বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা অনেকেই প্রশিক্ষণ ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ সময়ে প্রত্যেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

করোনাভাইরাস সংকটকালে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। তরুণরাই পারবে এই সংকটকালে অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এখনকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো।

প্রতিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবীধর্মী কাজের পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে পারে, যা কি না প্রতিটি কমিউনিটির সমস্যাগুলো সমাধান করবে এবং পাশাপাশি সেসব বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গণসচেতনতা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুবসমাজ যৌথভাবে অনলাইনভিত্তিক বা অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারে, যা সংকটকালীন ও পরে তাদের নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলবে ও জাতীয় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে। মসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আধুনিক বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশকে যুবসমাজরা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই যুবসমাজরাই দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী ভূমিকা নিয়ে নানা সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসবে।

লেখক : সংবাদকর্মী

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close