আবু জার গিফারী

  ০৬ জুলাই, ২০২০

মুক্তমত

করোনা নিরসনে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ

করোনাভাইরাস এমন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার প্রভাবে সারা পৃথিবী আজ থমকে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে সারা পৃথিবীর স্বাভাবিক গতিশীলতা। বর্তমানে পৃথিবীতে যতটুকু কাজকর্ম চলছে, সেটি নিতান্তই টিকে থাকার তাগিদে। একটি ভাইরাস যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, করোনাভাইরাস তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। করোনাভাইরাস মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। বিশ্ববাসী আজ তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে ক্ষমতা, অর্থ, অস্ত্র কোনো কিছুই আজ কাজে লাগছে না। মনে হচ্ছে সারা পৃথিবী এখন করোনাভাইরাসের হাতে বন্দি।

করোনাভাইরাস গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে সর্বপ্রথম চীনের উহান শহরে আঘাত হানে। প্রথম দিকে ভাইরাসটির ভয়াবহতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় বিশ্ব নেতারা তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। ফলে খুব দ্রুতই এটা এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চল, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি পর্যায়ক্রমে ইতালি, স্পেন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ইরানসহ বিশ্বের প্রায় ২১৩টি দেশে আঘাত হেনেছে। এখন তো সর্বত্রই ভয়াবহ অবস্থা। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল দিন দিন তর তর করে বেড়েই চলেছে। থামার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এ মহামারিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সবচেয়ে নাস্তানাবুদ। লক্ষাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের দাবি তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গত বছরের শেষদিক থেকেই সতর্ক করে আসছে যে, এমন একটি মহামারি ভাইরাস আসন্ন যেখানে লক্ষাধিক মার্কিন নাগরিকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিষয়টি সার্বিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে। শুধু যে প্রাণহানিই ঘটছে তা নয়, অর্থনৈতিক অবস্থাও একেবারে ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য দেশের অবস্থাও প্রায় একই। কোনো দেশই রেহাই পাচ্ছে না। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সারা বিশ্ব আজ লকডাউন। লকডাউনের ফলে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে ও অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা কমে গেলেও বিশ্ব অর্থনীতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার কোন সন্দেহ নেই।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। করোনাভাইরাস আসার আগেও এ রকম অনেক মহামারি দেখা দিয়েছিল। আমরা ১৯১৮-১৯ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর কথা বলতে পারি যার প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি মানুষের অকাল প্রাণহানি ঘটেছিল। আমাদের পূর্বসূরিরা যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আগাম উদ্যোগ নিয়ে রাখতেন তাহলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করা আমাদের জন্য কোনো ব্যাপারই হতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের পূর্বসূরিরা সেটি করেননি। শুধু পূর্বসূরিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা নিজেরাও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নিতে পারিনি। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা এমনিতেই কঠিন হয়ে গেছে, এখন কার্যকরী উদ্যোগ না নিতে পারলে খুব দ্রুতই এটি কঠিনতর হয়ে উঠবে। তখন মানুষ আরো কঠিন বিপদে পড়বে। তাই এখনই করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

২০১৬ সালে টেক্সাসের একদল বিজ্ঞানী সার্সের তথা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (করোনাভাইরাস পরিবারের আরেকটি ভাইরাস) একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু সেই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা করার জন্য অর্থ্যাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য যে তহবিল দরকার ছিল তা তারা সংগ্রহ করতে পারেননি। তহবিল সংগ্রহ না করতে পারার পেছনে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগের প্রকট অভাব ছিল। তখন থেকেই যদি সেই গবেষণাটি চালানো যেত তাহলে কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন গবেষণা অনেক সহজবোধ্য হতো বলেই মনে হয়। সার্সের টিকা আবিষ্কার সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে আলোর মুখ দেখতে পারেনি, একইভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে কোভিড-১৯-এর টিকা আবিষ্কার যদি আলোর মুখ দেখতে না পারে, তাহলে বিশ্ববাসীর জন্য মোটেও খবরটি সুখকর হবে না। সুতরাং সময় থাকতেই আমাদের তৎপর হতে হবে। আশা করি, বিশ্বের সব রাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে গিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সংঘবদ্ধভাবে কাজ করবে। আগামী প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে বাসযোগ্য করে ভুলতে এটির আর কোনো বিকল্প নেই। সমন্বিত উদ্যোগে সারা বিশ্ব খুব দ্রুত করোনামুক্ত হোক এটিই এখন সবার মনে প্রাণের চাওয়া।

লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close