এম আবদুল্লাহ আল মামুন খান

  ৩১ মে, ২০২০

সাফল্য

করোনা সংকটে নতুন শক্তিতে উদ্দীপ্ত পুলিশ

অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে একেবারেই অন্য রকম এক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী হতে কোনো অস্ত্র নেই পুলিশের! তবে সুযোগ নেই পিছু হটারও। চলমান এই যুদ্ধক্ষেত্রে কেবলমাত্র ধৈর্র্য, অসীম সাহস আর মনোবলই প্রধান শক্তি। অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলিয়ে বিজয়ের হাসি হাসতে চালিয়ে যেতে হবে অন্তহীন লড়াই-সংগ্রাম। কঠিন এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও সম্মুখসমর থেকে মৃত্যুভয়ে পালিয়ে আসেনি বাহিনীটির কেউই! দিনের পর দিন যুদ্ধ করতে গিয়ে পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে হননি বিপর্যস্ত। বীরত্বপূর্ণ অবদানের মাধ্যমে সাহসী ও মহান আত্মদানের মাধ্যমে ইতিহাসে নিয়েছেন ঠাঁই। সুচিকিৎসা ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমেই আবার যুদ্ধ জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মনোবল যেন প্রকারান্তরে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন বহুগুণে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশিত চলমান করোনাযুদ্ধে অগ্রসৈনিক পুলিশ বাহিনী চিরায়ত পুলিশিং থেকে বেরিয়ে এসে কাজে কর্মে এনেছেন বৈচিত্র্য। মানবিকতার উজ্জ্বলতায় নতুন ধারায়, নতুন প্রত্যাশার অবগাহনে অনন্য এক উচ্চতায় আসীন করেছেন নিজেদের। হয়েছেন নবতর চেতনায় উজ্জীবিত। নতুন সংকল্প ও স্বপ্ন নিয়ে করোনার বিস্তার ঠেকাতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপণ লড়াই। নিজে আক্রান্ত হয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় আর প্রাণহানির শঙ্কা তুচ্ছ করেই ১৭ কোটির বাংলাদেশকে সেবার পাশাপাশি সুরক্ষায় জীবনবাজি রেখেছেন বাহিনীটির অকুতোভয় বীর সদস্যরা।

অবশ্য এসব ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রভাবক হিসেবেই কাজ করেছেন সোয়া দুই লাখ সদস্যের বিশাল পুলিশ বাহিনীর প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। নিজের মেধা ও অভিজ্ঞতার সম্মিলনে যুদ্ধের ময়দানে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সাহস ও প্রেরণা জাগিয়ে মনোবলের ঘাটতি ঠেকিয়ে দিতে এই সেনাপতি সামনে থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। যুদ্ধ জয়ে বাড়তি রসদ হিসেবে কাজ করেছে তার সার্বক্ষণিক তদারকি। নিজ বাহিনীতে করোনাকে হার মানাতে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদের দূরদর্শিতা, সুদূরপ্রসারী চিন্তা, অসাধারণ দৃঢ়তা, সম্মোহনী ও তেজস্বী বাগ্মীতা সদস্যদের সাহস এবং মনোবল চাঙ্গা করেছে। দীর্ঘ ৩২ বছরের বর্ণাঢ্য পুলিশি চাকরি জীবনে নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের আবেগ ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতির সঙ্গে প্রবলভাবেই মিশে আছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। গভীরভাবে নিরীক্ষণ করেছেন তাদের যাপিত জীবনকেও। বিশেষ করে ভয়ংকর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কঠিন মুহূর্তে বাহিনী প্রধান হিসেবেই তিনি নিজ বাহিনীর মানস গঠনে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন।

আক্রান্ত সদস্যদের শারীরিকভাবে সুস্থ করে তুলতে তার সময়োপযোগী অব্যাহত পদক্ষেপ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার, সুচিকিৎসা ও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের দৌলতেই অবশেষে মন খারাপের প্রতিচ্ছবি মুছে একটি কাক্সিক্ষত সুসংবাদ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। করোনা হটিয়ে সুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে পুলিশে। এমন বার্তায় উচ্ছ্বাসের বিচ্ছুরিত আলোকণায় দুলে উঠেছে দেশের সব প্রান্তের প্রতিটি পুলিশ সদস্যের হৃদয়ের জমিন। জীর্ণ-পুরাতন আর মৃত্যু যন্ত্রণাকে কাটিয়ে দেশবাসীকে নতুন শান্তির পরশ দিয়ে নতুন ছন্দতালে জীবন উদযাপনের মন্ত্রে এখন অনুপ্রাণিত দেশপ্রেমিক বাহিনীটির সুস্থ হওয়া সদস্যরা। চলতি ঘোর দুঃসময়েও গত বুধবার ‘আশা জাগানিয়া’ তথ্যে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, ‘করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুস্থতার হার একদিকে যেমন দ্রুততার সঙ্গেই বাড়ছে তেমনি নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যাও কমছে। এ দিনও ১৬১ জন পুলিশ সদস্য করোনাকে হটিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

চলমান করোনাযুদ্ধে জনগণের সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে নতুন করে ৮৫ জন পুলিশ সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন। এই হিসাবে সুস্থতার হার সংক্রমণের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে ১ হাজার ২৮৭ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করোনাবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই উজ্জীবিত হয় গোটা পুলিশ বাহিনী। দেশের মানুষের সুরক্ষার পাশাপাশি প্রাণ বাঁচানোর যুদ্ধে চূড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রত্যয়ে শপথগ্রহণ করেন বাহিনীটির সদস্যরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুুদ্ধ হয়েই সব প্রতিকূল পরিস্থিতি পায়ে ঠেলে পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষের। গত দুই মাসে করোনার সঙ্গে দিনভর যুদ্ধ করে ক্লান্ত সদস্যরা ঠিকই অর্পিত দায়িত্বের টানে নিজেদের পরিবারকে চরম অনিশ্চয়তায় ঠেলে সকালে পূর্ণোদ্যমে আবার মৃত্যুভয় উপেক্ষা করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, করোনাকালে পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে। লকডাউন মানানো থেকে শুরু করে নিজেদের ত্রাণের পাশাপাশি অন্যদের ত্রাণের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা, মৃতদেহের সৎকার, করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সবই কাজই সমানতালে সামাল দিতে হচ্ছে পুলিশকেই। এর ফলে এরই মধ্যে ৪ হাজার ৫৩ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৪ জন পুলিশ সদস্য। দায়িত্ব পালনকালে নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যেককে নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছেন আইজিপি। ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দেশ ও মানুষের সেবা একটি বিরল সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থায়ীভাবে আসন করে নিতে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে জনসেবার অভূতপূর্ব ধারা।

একই সূত্র মতে, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও শুশ্রƒষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান। তাদের দেখাশোনার জন্য উচ্চপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করেছেন ‘বিশেষ টিম।’ এ টিম করোনাযুদ্ধের সৈনিকদের দুয়ারে গিয়ে গভীর হৃদ্যতার পরশে মানবিক সম্পর্ক যেমন গড়েছেন তেমনি সাহসও জুগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও ইমপালস হাসপাতাল ভাড়া করাসহ সব পুলিশ হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসার জন্য উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। ফলে পুলিশে করোনায় আক্রান্তের হার কমছে আর বাড়ছে সুস্থতার হার। স্বজনের মৃত্যুভয়ের শঙ্কার পরিবর্তে জেগেছে আশার আলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ের হাসি হেসেছে বাঙালি, মার্চের শেষ সপ্তাহে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এমনটিই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকটময় সময়ে ধৈর্র্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। আমরা সবার প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব, ইনশাআল্লাহ।’

করোনাকালে ভীত বহ্বল ও পান্ডুর সময়ে নিস্তরঙ্গ দেশে যেন কর্মগুণেই কালোত্তীর্ণ হয়েছে পুলিশ।

লেখক : সংবাদকর্মী বিশ্লেষক

mamuû[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close