গোপাল অধিকারী

  ২১ মে, ২০২০

মুক্তমত

সময়োপযোগী কাজ সব সময়ই ভালো

সময় বড়ই নিষ্ঠুর। তাই সময় ও ¯্রােত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। হাজার অর্থবিত্ত বা রাজত্ব থাকলেও কাল বা সময়কে কেউ কিন্তু কিনতে পারবে না। অর্থবিত্তসহ নানা উপকরণ দিলেও আমরা শৈশব আর ফিরে পাব না। কারণ আমরা সবাই সময়ের কাছে বন্দি। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। এ কথার সঙ্গে আমি আবার একটু দ্বিমতও পোষণ করছি বা ব্যাখ্যাটাকে একটু প্রসারণ করতে চাচ্ছি। আমরা নিয়ম মতো সব কাজ করব ঠিকই কিন্তু ভালো কাজ বা সুজনশীল কাজ সবসময় করতে পারি। এখানে সময়ের কাজ বলতে আমি সময় অপচয় না করাকে ধরে নিয়েছি। কারণ আমি যদি পড়ার সময় না পড়ে খেলাধুলা করি তাহলে তো পরে তা করা কঠিন হবে। শুধু তাই নয়, পরে তা সাধন বা পূরণ করা সম্ভব নয়। সেজন্য সাধনার একটি সময় থাকে। সে সময়ে তা করাই যুক্তিযুক্ত।

কিন্তু সুজনশীল কাজ যদি আমি এর মাঝে সম্পন্ন করি তাহলে মনে হয় মন্দের কিছু হবে না। যেমন এখন দেশব্যাপী এক প্রকার আতঙ্ক চলছে। করোনাভাইরাস নামক এই আতঙ্ক থেকে বাঁচতে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এখন সবাইকে ঘরে থাকতে হবে এটাই কাজ। কিন্তু কেউ যদি ঘরে থেকে কবিতা লেখে, বা গান লেখে, বা গল্প লেখে বা যেকোনো সৃজনশীল কাজ করা যায় তাহলে কী সময়ের কাজ হবে না? আমার মনে হয় অবশ্যই সময়ের কাজ হবে। বরং সময়োপযোগী কাজ হবে বলেই মনে করি। কারণ অনেকে ব্যস্ততার কারণে কর্মদিবসে সৃজনশীল কাজের সময় পায় না। তবে এখন কিন্তু অফুরন্ত সময়। তাহলে এখন যদি আমরা সেই সময়গুলোকে সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করি তাহলে সময়টাও ভালো কাটবে আর কাজগুলোও এগিয়ে যাবে। তাই বলতে চাই ‘সময়োপযোগী কাজ সব সময়ই ভালো’।

সময়ের ব্যবধানে অনেক বিখ্যাত হয়েছে আবার অনেকে কুখ্যাতও হয়েছে। তবে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন উদাহরণ কমই আছে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না আবার জগতে যেসব মণী-ঋষি বা জ্ঞানী-গুণী কাজের মাধ্যমে বড় হয়েছেন তারা সবাই সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। তাদের লেখনি কিংবা মহৎ কাজের জন্যই আজ আমরা তাদের মনে করছি; যা করবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মেও। মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকে না। বেঁচে থাকে কর্ম। আর কর্মের মাধ্যমেই জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে মানুষ, পায় অমরত্ব। দিন বদলে গেছে। দিন দিন সবকিছু কঠিন হয়ে পড়েছে। আগের সেই মান এখন নেই। মানুষর চিন্তা-ভাবনায় এখন প্রবল সংকট। যদি সময়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক চিন্তা ও চেতনাকে সংযোজন করা যায় তাহলেই সেই সংকট থেকে মুক্তি পাবে মানুষ। মনে রাখতে হবে, অসৎ মানসিকতা কখনো সুচিন্তার পরিচায়ক হয় না।

জগতে যারা নিজ নিজ কর্মের মাধ্যমে বিখ্যাত হয়েছেন তারা কী প্রথম থেকেই বিখ্যাত ছিলেন? তারা কী জন্ম থেকেই উপাধী পেয়েছিলেন? বলতে পারেন রবীন্দ্রনাথের জন্ম কত সালে? কত সালে তিনি কবিগুরু উপাধী পেয়েছিলেন? কত সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন? নিশ্চই জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই পাননি। নিশ্চই সব বইয়ের জন্য নোবেল পুরস্কার পাননি। তাহলে কেন আমি বা আপনি সংকীর্ণতায় হাতগুটিয়ে বসে থাকব? কেন একটি কর্ম করেই মনোবল হারিয়ে ফেলব? কথা দিলাম এই অলস সময়েই আপনি পুনরায় শুরু করেন আপনার পুরোনো প্রতিভা চর্চা অথবা অলস সময় কাটাতে এখনই বেছে নেন একটি সৃজনশীল কাজ দেখবেন আপনি নতুন পরিচয় পেয়েছেন, যা আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। আবার নতুন পরিচয় যদি নাও পান তবুও ক্ষতি নেই। সময়টা তো ভালোভাবে কেটে গেল। আপনি লিখছেন আপনার লেখায় কেউ হিংসা করছে? করবেই তো। ভালো কাজকেই তো অন্যেরা হিংসা করে! যে পারে না বা যার মেধা নেই সে হিংসা ছাড়া আর কী করবে?

যাদের মেধা আছে তারা হিংসা করে না বরং বেশি বেশি সেই চর্চাটা করে নিজেকে তৈরি করে। আমার মনে হয় যারা হিংসা করে তারা আরো বেশি পিছিয়ে পড়ে। কারণ তারা পরের চিন্তা করতে গিয়ে নিজের ভালোটা করার সময় বা সুযোগই পায় না। তাই বলি এই অবসর সময়ে করোনাকে উপলক্ষ করে হিংসাকে করোনার সঙ্গে বিদায় দেন। আর বেশি বেশি সৃজনশীল চিন্তা করেন। দেখবেন আপনার সৃজনশীল কাজে আপনি উপকৃত হচ্ছেন। আসুন আমরা এখনই খাতা-কলম হাতে নেই। কোন কর্মটা ভালো লিখে চর্চা করি। সৃজনশীল কাজ শুরু করি। সময়কে কাজে লাগাই। ঘরে থাকি নিরাপদে থাকি। আর আওয়াজ তুলি সমস্বরে সময়োপযোগী কাজ সবসময়ই ভালো।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close