সাহাদাৎ রানা

  ০৭ এপ্রিল, ২০২০

মুক্তমত

আসুন ঘরে থাকি

প্রতিদিন করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বিশেষ করে ইউরোপে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। উন্নত এসব দেশে এত মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বের সবাই আজ উদ্বিগ্ন। এর বাইরে নয় বাংলাদেশও। যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মহামারি আকারে করোনা ছড়াইনি। তবে প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন করোনাভাইরাসের কারণে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি স্কুল-কলেজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। প্রশাসনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় এখন মানুষ কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। সবাই যার যার বাসায় অবস্থান করছে। তবে শুরুতে মানুষের মধ্যে ঘরে থাকার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা গেলেও ধীরে ধীরে এর ব্যত্যয় ঘটছে। এখন অনেকে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা, কিছু মানুষের খামখেয়ালির কারণে ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ এখানে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। করোনা বিষয়ে এখানে সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে বাস্তবতা হলো ওষুধ আবিষ্কার না হলেও এখন এ রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। কিন্তু আমাদের ভয়ের পেছনে রয়েছে অনেকগুলো কারণ। প্রধান কারণ হলো আমরা নাগরিকরা সেভাবে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নই।

আমাদের জন্য আশার খবর হলো, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু ও মাথাপিছু আয়ও। প্রতি বছর বাড়ছে বাজেটের আকারও। এত কিছু বাড়ার পরও কিছুটা শঙ্কা রয়েছে সবার মনে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে। আমরা এখনো নানা কারণে স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে এটাও সত্য, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষ করে সংক্রামক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সফলতাপ্রভূত। এমন একটা সময় ছিল যখন হাম, বসন্ত, কলেরা, প্লেগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়েছে। সেই কঠিন সময় আমরা অনেক আগেই পার করে এসেছি। হাম, বসন্ত, কলেরা ও প্লেগ এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এমনকি পোলিও নির্মূল হয়েছে অনেক আগেই। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওরস্যালাইন এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন; আর এর কৃতিত্ব বাংলাদেশের। উন্নত কোনো দেশে হলে নিশ্চিত নোবেল মিলত। অথচ আমরা ভেবেও দেখি না, অত্যন্ত সরল এক সমাধান সারা বিশ্বের প্রতিনিয়ত অযুত-নিযুত মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। এ যেন এক জাদুকরী নিদান। এ ছাড়া সফলতা এসেছে মা ও শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও। আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে। আবার বিপরীত চিত্রও রয়েছে। বতর্মান সময়ে আমাদের দেশে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে; যা রীতিমতো আশঙ্কার, আতঙ্কের। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, পক্ষঘাতগ্রস্ততা, কিডনি রোগ, অটিজম ও মানসিক রোগীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত। এসব রোগ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে মাথা ব্যথার কারণ।

এর মধ্যে এখন সবার জন্য ভয়ের নাম হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে করোনা প্রতিরোধে আমাদের সক্ষমতা নিয়ে। তবে আশার খবর হলো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সব হাসপাতালে গাউন, মাস্ক ও গ্লাভস যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে শুধু সরকারের একার পক্ষে উদ্যোগ নিলেই হবে না। সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে সবাইকে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, এসপি, ইউএনও, সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাদের কঠোর হতে হবে। যদি কেউ এ ক্ষেত্রে আইন না মানে, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। করোনাভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেই হবে না। পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা যেন বাইরে ঘুরে না বেড়ায়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে অভিভাবকদের। তবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। কেউ যেন এলাকার গলিতে ঘোরাঘুরি না করে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে অভিভাবকদের।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি করোনার ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে আমাদের সামনে। সেই বাধার নাম গুজব। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ অহেতুক গুজব তৈরি করছে। আর সেই গুজবে কান দিয়ে কিছু মানুষ অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য কিনছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কিছু মানুষ তা মানছেন না। তাই এ বিষয়ে সরকারকে আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কিছু মানুষ ইচ্ছা করে গুজব রটাচ্ছে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়েও। মানুষকে সচেতন না করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা অন্যায় ও অপরাধ। সরকারের উচিত এসব অপ্রচারের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

আমাদের জন্য করোনাভাইরাসের বিষয়ে সবচেয়ে আশার খবর হলো, করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ হলেও অধিকাংশ মানুষ এ রোগে সুস্থ হয়ে যান। এ ক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই। সতর্ক ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে মূলত করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। এখন সবাইকে মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিশেষ করে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে সচেতন হতে হবে। থাকতে হবে ঘরে। সবার সচেতনতায় সম্ভব করোনা প্রতিরোধ করা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close