নিতাই চন্দ্র রায়

  ০৬ এপ্রিল, ২০২০

মুক্তমত

এই যুদ্ধে জয়ী হতে হবে

করোনা মহামারির বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সামরিক যুদ্ধে নেতৃত্বে থাকেন সেনাবাহিনীর জেনারেলরা। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা। তাদের আদেশ-নির্দেশ জনগণকে বিনাবাক্যে পালন করতে হবে। এখানে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। আগামী ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার ও তাইওয়ানের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসতে শুরু করবে। দেশ ও জাতি এই মহামারি থেকে রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে চীনের সফলতার গল্প প্রাসঙ্গিক। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে চীন সঠিক ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। চীনের মতো সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানও সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। চীন সরকার একে গণযুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ‘ফাইট অন উহান’, ‘ফাইট অন চায়না’ কর্মসূচি চালু করে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশগুলো অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস আক্রমণের পর মহামারিতে জ্বর মাপা নিয়মে পরিণত হয়। চীনের উহানে জ্বর হলে জ্বর মাপা বাধ্যতামূলক করা হয়। তাপমাত্রা মাপার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা অনেক জায়গায় বাড়ি বাড়ি যান। কঠোর ‘লকডাউন’ করে চীন করোনা সংক্রমণ দমন করে। আক্ষরিক অর্থেই কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। কিছু কিছু বিল্ডিং পুরো ‘লকডাউন’ ছিল। কিছু কমিউনিটি ‘লকডাউন’ ছিল। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে যেত। খাদ্য থেকে শুরু করে ওষুধ, সব দুয়ারে দুয়ারে পাঠানো হতো।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনে এগোতে পারলে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের সরে থাকতে হবে এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কথা অবশ্যই শুনতে হবে। যুদ্ধের সময় যেমন জেনারেলরা প্রতিদিন ব্রিফিং দেন, তেমনি এখন মহামারিবিষয়ক জটিল ধারণা ব্যাখ্যা, ওষুধ ও সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার পরামর্শে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এখন আমাদের শত্রুর ওপর মনোযোগ দিতে হবে। শত্রু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও ভয়াবহ করোনাভাইরাস। যদি কোনো জাদুমন্ত্রের মাধ্যমেও ১৪ দিন পর্যন্ত মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায় এবং ছয় ফুট দূরত্ব তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে তাই করতে হবে। এভাবে এই মহামারি অনেকাংশে আটকে দেওয়া যাবে। এতে ভাইরাস সংক্রমণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা যায়। যদি যথেষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমিত সবাইকে আলাদা করে ফেলা যায়, তাতে সমস্যা অনেকটা কেটে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে সবার পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না অনেক দেশে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘লকডাউন’ ও সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করার বিকল্প নেই। এই পদক্ষেপের জন্য ভ্রমণ ও মানুষের মধ্যে সংস্পর্শে আসার বিষয়টি অবশ্যই কমাতে হবে।

সিঙ্গাপুর আক্রান্ত সবাইকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং পুরোপুরি ভাইরাসমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নজর রাখে। অনেক রোগীকে একসঙ্গে রাখার জায়গা তারা তৈরি করেছিল আগেই। আক্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল আর সাধারণ লোক, যাদের মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, কিন্তু করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেনি তাদের কাজ থেকে পাঁচ দিনের অব্যাহতির কথা উল্লেখ করে একটি সদনপত্র দিয়ে সরাসরি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যারা দিনমজুর, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

আমাদের প্রত্যাশা, দেশের ১৬ কোটি মানুষ দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের মতো করোনাভাইরাসকে পরাজিত করে বিজয়ের পতাকা ওড়াবে শিগগির। করোনাযুদ্ধে জাতিকে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।

লেখক : কৃষিবিদ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close