reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা জরুরি

কিন্তু কীভাবে! এ প্রশ্ন আজ সবার। সমাজে বসবাসকারী মানুষের চিন্তা ও চেতনা যদি দূষণ আক্রান্ত হয়, তখন তার পারিপার্শ্বিক কোনো কিছুই দূষণমুক্ত থাকতে পারে না। থাকাটা স্বাভাবিকও নয়। আমাদের দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে যারা প্রতিষ্ঠিত, তাদের বেশির ভাগের চিন্তা ও চেতনা দূষণ আক্রান্ত। ব্যতিক্রম যে নেই, তাও নয়। তবে তুলনামূলক বিচারে এদের সংখ্যা কম। কম হলেও বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। সম্ভবত এদের কারণেই দেশ আজ তার মর্যাদা রক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, চিন্তা-চেতনায় দূষণ আক্রান্ত মানুষগুলোর কারণে আজ আমরা দূষণযুক্ত দেশে পরিণত হয়েছি। দুর্নীতি আমাদের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই পথ ধরেই বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে বাংলাদেশ আর দ্বিতীয় দূষিত রাজধানী ঢাকা। তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ দেশের সবই এশিয়ার। বাংলাদেশের পর শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাহরাইন, নেপাল, উজবেকিস্তান ও ইরাক। বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি বিবেচনায় ৮৩ দশমিক ৩ স্কোর নিয়ে দূষিত রাজধানীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। আর শীর্ষে থাকা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির স্কোর ৯৮ দশমিক ৩। এ তালিকায় দ্বিতীবারের মতো শীর্ষে অবস্থান করছে প্রতিবেশী দেশের রাজধানী শহরটি।

তথ্য মতে, ক্রমাগত বায়ুদূষণের ফলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার জীবনমানের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ছে। এ অঞ্চলের শহরগুলো বায়ুদূষণের ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরবাসীর কাছে যানজটের পাশাপাশি আরেক যন্ত্রণার নাম বায়ুদূষণ। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কবলে নগরজীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে। বাড়িয়ে তুলছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগীরা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক (একিউআই) ৫১ থেকে ১০০ স্কোর থাকলে বাতাসের মানকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার একিউআই স্কোর ৪০০ ছাড়াতে দেখা গেছে। বিশ্ব একিউআইয়ের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ঢাকার বাতাসের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩১৯। তবে ফেব্রুয়ারিতে কখনো তা দুশোর নিচে নামেনি। এ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৪৭৭। ঢাকায় অবস্থিত ইউএস কনস্যুলেটের মন্তব্য : অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে একিউআইয়ের সর্বোচ্চ স্কোর ৫০০-কেও ছাড়াতে পারে। অন্য এক তথ্য মতে, প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণক্ষমতা কমে শ্বাসকষ্টের উল্লম্ফন ঘটে। প্রথমে শ্বাসনালি ও চোখে সমস্যা তৈরি করে। ফলে অ্যাজমা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও বহু গুণে বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি দূষিত বায়ূ গ্রহণ করার ফলে ব্রঙ্কাইটিজ থেকে ফুসফুসে ক্যানসারের সংক্রমণ সম্ভাবনাও প্রবল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ রক্ষা করতে হলে মোটা দাগে যানবাহন, নির্মাণশিল্প ও কল-কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন বাস্তবতার নিরিখে বিচার করতে হবে। তথ্য মতে, দেশে বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ।

আমরা মনে করি, এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা এখন যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছি, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা বা বের করে আনার দায়িত্ব পুরো জাতিকেই গ্রহণ করতে হবে। দূষণযুক্ত চিন্তা ও চেতনাকে দূষণমুক্ত করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ। আমরা যদি আমাদের চিন্তা-চেতনাকে কালিমামুক্ত করতে পারি, তাহলেই সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে সরকারকে হতে হবে কঠোর এবং নজরদারিকে বাড়াতে হবে বহু গুণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close