reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

জীবনের জন্য মাতৃভাষা

আজ মহান অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত মাস। এ মাসেই জীবন উৎসর্গ করে বাঙালি জাতি তাদের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছে। ১৯৫২ সালে যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের দাবি আদায়ের সূচনা করে, তারই ধারাবাহিকতায় আজকের স্বাধীনতা। তাই ভাষা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার আর সব কাজের অনুপ্রেরণা। আমাদের মাতৃভাষা তিব্বতের গুহাচারী, মনসার দর্পচূর্ণকারী, আরাকান রাজসভার মনিময় অলংকার আর বরেন্দ্রভূমির বাউলের উদাসী কলতান। প্রত্যেক শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ যেমন অপরিহার্য, ঠিক তেমনি ভাষাও মানবজীবনে একইভাবে অপরিহার্য। ভাষা যেকোনো জাতির সৃজনশীল ধীশক্তির অপূর্ব সৃষ্টিÑ এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। মেধার অনন্য লালন ক্ষেত্রের নাম ভাষা। জাতীয়তা বোধ নির্মাণের এক আকর্ষণীয় স্থাপত্য। সারা বিশ্বে প্রায় সব ক্ষেত্রে ভাষার ভূমিকা এর বাইরে নয়।

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে কোনো দিন সুনজরে দেখেনি। তারা মনে করত, বাংলা হিন্দুদের ভাষা, হিন্দু সংস্কৃতির ধারক-বাহক। সেখান থেকেই ষড়যন্ত্রের শুরু। ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান গণপরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একটি ‘মূলনীতি কমিটি’ গঠন করেন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটির ওপর। ১৯৫০ সালে ‘মূলনীতি কমিটির’ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। পূর্ববাংলার নেতারা এত দিন যে দাবি উত্থাপন করে এসেছিলেন কমিটির রিপোর্টে তার একটিও স্থান পায়নি। নেতাদের দাবি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। ১৯৫১ সালে লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর খাজা নাজিমুদ্দীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ঢাকায় এসে ১৯৫২ সালের প্রথম দিকে ভাষার প্রশ্নটি আবার উত্থাপন করেন এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে অনুসরণ করে বলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। আকাশের কালো মেঘ যেন গর্জে উঠল। প্রতিধ্বনিতে ভাসল আমাদের পাললিক ভূমি।

তুমুল আকার ধারণ করল প্রতিবাদের ঝড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রাদেশিক পরিষদের আসন্ন অধিবেশন সামনে রেখে দেশব্যাপী আন্দোলনের পারদ ওপরের দিকে উঠতে থাকে। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বিষয়টিকে বানচাল করতে রাজপথে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিক। রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ। আর এখান থেকেই শুরু। আমরা তাই ২১ ফেব্রুয়ারিকে বলে থাকি স্বাধীনতার সূতিকাগার। আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিল শতভাগ। কেননা, পাকিস্তানের মোট জনসমষ্টির শতকরা ৮ ভাগ ছিল উর্দু ভাষাভাষী। সেই ভাষাকেই করা হয়েছিল পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। অথচ শতকরা ৫৬ জন বাংলায় কথা বলার পরও সেই ভাষাকে কোনো মর্যাদাই দেওয়া হয়নি। মর্যাদা দেওয়া হোক আর নাই হোক আমরা বিদ্রোহ করেছি। আমরা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্যের জন্য লড়াই করেছি এবং আদায়ে সমর্থ হয়েছি। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উর্দুর সঙ্গে বাংলাও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর জন্য আমাদের অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। সেই ত্যাগের কথা স্মরণ করে আজ আমাদের পথচলাকে নির্ধারণ করব। জাতির কাছে এটুকুই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close